১৫ ডিসেম্বর ২০১২


মহান বিজয় দিবসে আক্ষরিক পঞ্চম সংখ্যা প্রকাশিত হলো অনেক প্রাণ ও সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার ৪১ বছর পর এসেও একজন মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়হীন দূর্দশাগ্রস্থ জীবন বয়ে বেড়ান এমন দৃশ্য দেখতে আমাদের হয় ইয়াহিয়া বলেছিলেন , " দেশের মাটি চাই , মানুষ নয় " মাটি মুক্ত হয়েছে ঠিক তবে সেই স্বাধীনতা রক্ষার কঠিন চ্যালেঞ্জ আমরা পার হতে পারি নি হয়ত

মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে কবি -সাহিত্যিকদের ধারালো বর্ণ ঝংকার এখনও নব প্রজন্মকে উজ্জীবিত করে স্বাধীনতা বিষয়ক গ্রন্থ , কবিতা , চলচিত্র , উপন্যাস সকল বিজয়ের যে নিখুঁত প্রেক্ষাপট ধারণ করে রেখেছে তা অনবদ্যসকল শহীদ ও জীবিত মুক্তিযোদ্ধাসহ ১৪ ডিসেম্বর ৭১ এ গণহত্যার শিকার দেশের সূর্য সন্তানদের বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে আক্ষরিকের এ সংখ্যা

" তোমাদের এই ঋণ কোনদিন শোধ হবে না "
ঋণ শোধের প্রসঙ্গ থাক , দেশটাকে গড়ার অঙ্গিকারে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে হাতে হাত রেখে পথচলা শুরু করাই কাম্যআসুন ,আমরা ১৬ কোটি বাঙালী নতুন সূর্য উদয়ে এই প্রত্যয় রাখি
                                           
                                                - আক্ষরিক সম্পাদক 

কাসাফাদ্দৌজা নোমান

গল্প: একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার আত্নার কাল্পনিক কথা

বিশালাকায় কোন মানচিত্র নয়, ছোট্র একটি মানচিত্রের পিঠ চাপড়ে বললাম "তুই ভাল থাকিস।" সবুজ আর লালে উড়তে থাকা পতাকাকে বললাম "তুই আমার দেশ, তুই উড়িস মাকে নিয়ে" আমি চললামভয় পাসনে আমার গায়ে যে রক্ত দেখছিস সেটা রক্ত নয় ঘামএই ঘামের পরিশ্রমে মানচিত্র আর পতাকাকে উড়তে দিয়েছিএই ঘামের প্রতিটি বিন্দু হিসাব করাকেবল আমি নই লাখ লাখ মানুষ এই ঘাম ঝরিয়েছেএই ঘামের অবহেলারও হিসাব হবেহুমম এভাবেই বলতে বলতে চলে গিয়েছিলামআজ আবার ফিরে আসলামনা না জীবন্ত হয়ে না, আত্নার কিছু দ্বায় নিয়েআমি নিজেই জানিনা আমি কোথায় সমাহিত হয়েছিআদৌ কি সমাহিত হয়েছি কিনা? তবে এটা জানি আমার ধর্মের রীতি অনুযায়ী দাহ হয়ে ছিলামআমার হাঁড়ের অবশিষ্ট কোন টুকরো আছে কিনা সে ব্যাপারেও আমি নিশ্চিত নাআমার নামইতো বিলীন হতে বসেছেবাংলাদেশের মানুষই যখন আমার ঘামের কথা ভুলতে বসেছে মাটিই বা কি করবে

রাজীব চৌধুরী

মরা চোখ 
"মাগো- আমি আর পারিনা গো" বলেই মাটিতে বসে পড়ল মুন্নি। চোখে মুখে ব্যাথা স্পষ্ট হয়ে আছে। পা দুটো ধরে কাঁদতে শুরু করেছে। তার মত ১৪ বছরের মেয়ের জন্য এভাবে মাইলের পর মাইল পথ পারি দেয়া খুবই কষ্টের। সবে মাত্র যৌবনে পা দিয়েছে মুন্নি। কিন্তু এখন তাকে যেতেই হবে। কারন পেছনে হানাদার বাহিনী চলে এসেছে অনেক কাছে। মুন্নির দিকে তাকিয়ে সন্দীপ রায়ের চোখে মুখে স্পষ্ট ভয় প্রকাশ পেল।

জবরুল আলম সুমন


আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, বিজয় ও আমাদের বর্তমান প্রজন্ম ভাবনা...
প্রতিটা স্বাধীন রাষ্ট্রের একটা নিজস্ব সমৃদ্ধশালী ইতিহাস আছে ঠিক তেমনি ভাবে আমাদের এই স্বাধীন রাষ্ট্রেরও আছে সমৃদ্ধশালী ইতিহাস। যে ইতিহাসের সূচনা হয়েছিলো মহান ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে আর তা নানান পথ পাড়ি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে পূর্ণতা পেয়েছিলো কিন্তু আমরা বা আমাদের প্রজন্ম নিজের চোখে মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। আমরা মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হয়েই একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। আমাদের স্বীয় চোখে অদেখা ছিলো সাধারণ বাঙ্গালীর উপর পাকিস্থানী শাসক গোষ্ঠির দমন পীড়ন শোষণ নির্যাতন অতঃপর ঐক্যবদ্ধ মুক্তিকামী বাঙ্গালীর বলিষ্ঠ প্রতিবাদ আর জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া, ফলাফলে প্রিয় মাতৃভূমিকে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠা করা। আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি বিকৃত গ্রন্থকীট গিলে গিলে আর বায়োজ্যেষ্ঠদের চোখে। পাঠ্য বইয়ে কোন শিক্ষা বর্ষে পা রেখে পড়েছি স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান। সে বর্ষের পাঠ্য বইয়ে জিয়াউর রহমানকে দিয়েই মুক্তিযুদ্ধের শুরু আর তাকে দিয়েই শেষ, সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আবার কখনো অন্য কোন শিক্ষা বর্ষে গিয়ে পড়েছি কেবলমাত্র জাতির জনকের সুযোগ্য নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের রক্তপথ পাড়ি দিয়ে আমাদের এই দেশ বিশ্ব মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে নিজেকে অঙ্কিত করেছে, সে বর্ষে কেবলই জাতির জনক বন্দনা, অন্যদের অবদান ঠিক আগের মতোই ছিলো অনুপস্থিত। আমি এই স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কোন বিতর্কে এই মুহুর্তে নিজেকে জড়াতে চাইনা। সত্যিটা বললে বলবো আমি অক্ষম! কারণ ক্ষমতার গদিতে যার পাছা ভর করেছে সে-ই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ছুরি চাকু চালিয়ে তারমতো করে নিয়েছে। তাই আমাদের এই প্রজন্ম, বয়সের বা শিক্ষার একেক ধাপে এসে একই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ইতিহাস গিলেছি, গিলে গিলে বড় হয়েছি।

ফারহানা খানম


অর্কিড
দেয়ালে অর্কিড ফুটে আছে
উপত্যকা জুরে নীল নীল ফুল
ওপারে পাথুরে দেয়ালে
ধুসর রঙে জড়ানো।
ঝুলন্ত সাঁকোয় দাঁড়িয়ে দেখছি
নিসর্গের হাতছানি ,দুরন্ত ঝর্ণার বয়ে যাওয়া
সময়ের সন্ধিক্ষনে আমি । শরীরময়
রক্তখেকো বীজাণুরা বাড়ছে দারুন , আমার হৃদয়টাও এমন
যেন অনায়াসেই ধারন করতে পারি আস্ত তুমিটাকে
জীবনের সুখ -দুঃখ সবটুকু ।
সাঁকোটা পেরোতেই হবে আজ ,
সূর্যাস্ত দেখবো
অমোঘ নিয়্তি জড়িয়ে আছে যেমন মেঘেরা জড়িয়ে
থাকে পাহাড় -চুড়া , আর ভালোবেসে পৃথিবীকে জড়িয়ে রাখে
নিশুতি রাতের জ্যোৎস্নারা ।

মোঃসরোয়ার জাহান


স্বাধীনতার মন্ত্রমুখে 
যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত কবি
গনতন্ত্র পুড়ে যাচ্ছে পরাজিত শক্তির দগ্ধ আগুনে
চৌদ্দ কোটি মানুষের মুখ আর মুখোশের পার্থক্য
এবার চিনে নেবে জন্মান্ধ স্বাধীন বাংলাদেশ !
নিঃশব্দে নয় যুদ্ধে যাত্রা এবার স-শব্দে
ইতিহাস দুপায়ে মাড়িয়ে সামনে পরাজিত শক্তি !
ওঠো,ওঠো সবাই স্বাধীনতার মন্ত্রমুখে
ওঠো বাংলাদেশ
ওঠো বিক্ষুব্ধ বাতাস
ওঠো রক্তাক্ত রাজপথ
পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে রুখে ওঠো !

আহমেদ মুনীর


জয়তু কবিতা জয়তু জীবন 

কবিতাই আমাকে বাঁচিয়ে রাখে
কবিতাই দেয় আমাকে বেঁচে থাকার সম্পূর্ণ জীবনীশক্তি
অসম্ভব ক্লান্তির মধ্যে একটুখানি আশ্রয় বিশ্রাম বিনোদন
অথৈ সমুদ্রে পাই আমি নির্ভরতা ও ভাসমান ভেলা
বায়ুদূষণ রোধ করে কবিতাই আমাকে দেয় খাঁটি অম্লজান
কবিতাই উম্মুক্ত করে দেয় আমার সকল আশা আকাঙ্খার পথ
কবিতাই দূরীভূত করে সকল বাধা প্রতিবন্ধক
অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যেও আমি নির্মাণ করি কবিতার উপমা
উৎপ্রেক্ষা কবিতার সম্প্রসারণশীল শরীর ।।
শহরের ইট বালু সিমেন্টের বিশাল প্রাসাদ সরিয়ে কবিতা
নির্মাণ করে সবুজ প্রকৃতি নিসর্গ আর তার বাসযোগ্য জলবায়ু
কবিতা আছে বলেই জগত গতিশীল ক্রম অগ্রসরমান
কবিতা আছে বলেই জরা দুঃখ মৃত্যু দূরে সরে যায়
যতবারই আমরা মৃত্যুর দ্বারে পৌছি
কবিতাই সেই মৃত্যুকে ফিরিয়ে দেয়
কবিতা আছে বলেই আমরা ভালবাসার গল্প বলি
কবিতা আছে বলেই আমরা সুষ্টির নেশায়
আলোকের দিকে ছুটি
জয়তু কবিতা জয়তু জীবন ।।

অরিন্দম চন্দ্র


সোভিয়েত সেনসেশনস

বিজ্ঞাপনের বিলাসীবালার
আকাশনীল অন্তর্বাসে লাল-তারা-
“সোভিয়েত সেনসেশনস” রা ডাকছেন,
“আরে নাহ!মুক্তির পথে নয়-”

নদীর ধারে ছলাৎ-ছল,
নাচছে বুকে জোর মাদল,
লালচে গেলাশ হলাহল
কাদের হল রক্ত জল?

“ধুস...এসব প্রশ্ন কোর না”,
আরেক কিস্তি D.A,
কাগজী-লেবু দিয়ে,
জলের মতন ইয়ে।

তিন মাথা এক হয় চাটার্ড-বাসের জানালায়,
“এক পিস যাচ্ছেন”—
কেমন চলা,কেমন দোলা
কেমনতরো ফোলা-ফোলা,
“সঙ্গে বস না পাড়ার পোলা”?

নেই-দেশে হোক,এই দেশে হোক,
আগুন জ্বলুক,জাগুক লোক
আবার উঠে বলবে কবে
“লাল-তারাটাই সত্যি হবে!”


( কলকাতার খুব কাছের এক ৫ তারা হোটেলে সম্প্রতি এক পঞ্চ-ম এর সাধন-ভজনের অনুষ্ঠানে "সোভিয়েত সেনসেশনস" নামে এক নাচের দল আসে।।

মৌ দাশগুপ্তা


দিঘী ও একটি কাহিনী
চোখ বুঁজলেই সেই বিগত জীবনের চুপকথা,
বনজ সুঘ্রাণে ভরা ঝোপঝাড়,পায়ে চলা পথ,
পাখীর কলতানে বিভোর ছায়ামাখা বাঁশবন,
একাকী সেই শান্ত নীল দিঘী,
শ্যাওলা জমা ভাঙা পাথরের ধাপ,
পায়ের পাতা ডোবা ছলাৎছল ঠান্ডা জল,
দিঘীর শান্ত ঢেউজলে দোলে ঝরাপাতা,
রূপোলী আঁশে আলো ঝিকিয়ে ঘাই মারে মাছের দল,
জলে আঙ্গুল ডোবালেই নরম স্পর্শসুখ,
সেই জলে বৃত্তের পর বৃত্ত তুলে আনমনে ভাসে
লাজুক কিশোরীর হাতের কাগজের নৌকো।
সাক্ষী থাকে এক কিশোর,হাতে সুরেলা আড়বাঁশী।

চোখ মেললেই নকশীকাঁথার রহস্য উধাও,
পাতায় কাঁপা শেষ বিকালের পরশকাতর রোদ,
আকাশতলায় ধোঁয়া হয়ে মিশে যায় স্মৃতির ধূলোয়,
সেই ঝোপঝাড়,বাঁশবন,চোখের তারায় সময় হারায়,
নীড়গমী পাখীর ডাক আজ বুঝি তাদের ঘুম ভাঙ্গায়না,
প্রাচীন স্থবির দিঘী কচুরীপানার আলপনায় শুয়ে বিশ্রাম নেয়,
জলজ আগাছায়, ঝরা পাতার স্তূপে, ভরে ওঠে তার বুক,
আর সেই সাথে হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার ঠিকানা নিয়ে,
মেকি আলোছায়ার জগতে হারিয়ে যাওয়া কিশোরের খোঁজে-
একা জীবনের পাকদন্ডী বেয়ে - ভ্রূক্ষেপহীন পদক্ষেপে হেঁটে যায়,
সেদিনের সেই কিশোরী, আজকের রূপকথা মেয়ে।।

রনক জামান


সম্পর্ক

যা বলেছি তাই শুধু শুনেছ, যা বলিনি যদি তা শুনতে...
যদি শুধু বুঝতে নিঃশব্দতার মানে...
তাহলে হয়তো দূরত্ব সম্পর্কিত হিসাবের এতটা গড়মিল হতো না,
পাশাপাশি থেকে যাওয়া গানগুলো অবেলায় হারাতো না সুর,
গনিতের হিসাবে যখন দূরে থাকি-
কে বলে দূর তাকে, কেবলই মনে হয়, এই তো তুমি-
অদৃশ্য়তার চাদর গায়ে বসে আছো আমারই পাশে- জলজ্য়ান্ত;
অথচ কাছাকাছি থেকে যাওয়া মুহুর্তগুলো ধোঁকা দেয়,
কাছাকাছি... আরো কাছে...
তবুও ঝাপসা লাগে তোমায়, মনে হয়-
তুমি আর আমি যেন পরস্পর জগতের সবচেয়ে অপরিচিত কেউ,
কতশত শতাব্দীর দূরত্ব আমাদের মাঝে-
কেবলই ভ্রান্তি!
কেবলই মনে হয়- যা বলিনি যদি তা শুনতে...
যদি শুধু বুঝতে নিঃশব্দতার মানে...

রাইসুল ইসলাম সেতু


একটি আধপোড়া ডাহুক জীবন

এইসব ধুলোজমা আকাশের নিচে 
আমি এখনও দিনলিপি গুনে চলেছি,
প্রতিনিয়ত নিঃশ্বাসে জেগে থাকে
আধপোড়া এক ডাহুক জীবনের স্বাদ
অমন সরীসৃপ চোখে কি দেখো বারবার ?
ক্ষিপ্রতায় যে প্রবল ভয় জমে,বোঝ না?
যদিও সুতো ছিঁড়েছিল অনেক আগেই
তবু জানলেনা,কতটা জল গড়ালে
একফালি মেঘের অস্তিত্ব পুরোটা বিলীন হয়

আমি এখনও মাঝে মাঝে বেঁচে উঠি,
আধারের ব্যস্ততম আনাগোনায় টের পাই
বাঁ চোখের দুঃস্বপ্নে গড়া ডান চোখের নিরবতা
ঘরের সিলিংটা বেশ রঙিন,আস্কারা পাই
ওর সাথে সারারাত চলে দৃষ্টির সহবাস,
অবহেলিত অভিমানে জ্ঞান হারায়
জাগতিক দিনের মুমূর্ষু রণসঙ্গীত
কি এক মাতাল খেলায় মেতে উঠি-ভীষণ খরস্রোতা;
ভয়হীন,রোদহীন,ভালবাসাহীন     
ধীরে ধীরে ভুলে যাই আধপোড়া ডাহুক জীবন

হঠাৎ এক তীক্ষ্ণ আওয়াজে কেঁপে ওঠে ঘর -
আলোকছটায় চিড় ধরে আধারের ত্বক,
ধড়ফড় চেতনায় উঠে বসি-হাঁটু মুড়ে
প্রাণপণে দুহাতে কান চেপে ধরি,ফুঁপিয়ে উঠি
ক্ষণিক বাদে ধাতস্ত হৃদয় শুনে যায়-
দূরে কোথাও বেজে ওঠা চেনা হাসির আঘাত,
কে যেন ইশারায় বলে-
ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে তার বেনারসি রাত।  

তারপর দুচোখে বাড়ে ক্ষমাহীন রাত,
নীল নীল জলে ভাঙে নীলাভ প্রভাত ।।  

বিলকিস আরা ক্ষমা


বাংলার মাটি 

বাংলা আমার ভাষা
বাংলা আমার কণ্ঠস্বর
বাংলা আমার স্বর্গউদ্যান
বাংলার মাটি আমার মায়ের কোল

একাত্তরে কিছু স্বৈরাচারীর দল ভয়ংকর এক কালো রাত্তির
পর্দা ভেদ করে ঢুকে পরেছিল সবুজে সবুজে ঘেরা বাংলার
এই ছুট্ট একটি স্বর্গ উদ্যানে...

একটু একটু করে গ্রাস করতে চেয়েছিল ওরা আমার বাংলা
মায়ের কোঁল
একাত্তরের এক অলস দুপুরে ওরা আমার মা- বোনের সম্ভ্রম
কেরে নিয়ে নগ্ন উল্লাসে উচ্চকণ্ঠে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় বলেছিল
আহ কি অপরুপ তৃপ্তি এই বাংলার নারী......

কেঁদে উঠেছিল একাধারে শত শত লাঞ্ছিত জননী,
ধর্ষিতা আবলা নারী...
স্বাধীনতার আজ চল্লিশ বছর,
কোথায়...আজ ও কি স্বাধীন এই বাংলাদেশ ???
আজ ও এই সোনার বাংলায় তৃষ্ণা কাতর হিংস্র কিছু কুকুরের
লালার বীজ রুপন হচ্ছে এই বাংলার মাটিতে।।

বাংলার মাটি হয় আজ ও গর্ভবতী...

এমদাদুল আনোয়ার

বিরল নীরবতা

ভালবেসে তোমাকে এনেছি আমি
শব্দহীন এই গন্ধাচ্ছন্ন বাতাসের কাছে 
সমস্ত দক্ষিন-ই ঝুঁকে আছে দেখো
মন দিয়ে শোনো; কান দিয়ে নয়
ভালবাসার শব্দ এরকম-ই হয়।

কেউতো বলেনি,
“সাগরের ঢেউ কিনারে এসো”
এত কাছে এসে তবু কেন তারা থেমে রয়েছে----
তুমি কি ভেবেছো কখনো?
এবং পাখিরা চঞ্চল যারা
ভুলে গেছে কেন গান?
শুধু তাই নয়
বিশ্বকর্মা স্বয়ং ব্রহ্মাও পেতে আছে কান।

নীরবতা শোনো যমুনা পাড়ের চ্যানেলে
মৃত্যুর মত নিরবতা শুধু---মেলেনা এমন
কানুর পীরিতি না হলে।

আলী রেজা

মৃত্য নগরী

ঝিঁ ঝিঁ পোকার ধারালো দাঁত
সন্ধ্যার চাদরটাকে কাটতে থাকে;
গেরুয়া কুয়াশা সরিয়ে 
তুমি ভিতর বাড়ীতে পৌঁছে দ্যাখো
বৃক্ষের গোপন কন্দরে ঘুঘুর প্রসারিত ডানা,
মৃত নগরীর কঙ্কালে নিগূঢ় সূর্যালোক,
পথভোলা মানুষের ফিসফাস আওয়াজ-
রাত্রির তৃতীয় প্রহরে আকাশে
দেখা যাবে কি পথের দিশা?

চান্দ্রবিষে নীল নোনা অবসাদে নিমজ্জিত
আবারো জেগে উঠি প্রাত্যহিক বাহানায়
কোথায় ফেলে যাবে হৃদপিন্ডের রক্ত বুদ্বুদ
উধাও নিবিড় পরিচর্যার খাঁচা তবুও রয়ে যায়
চারপাশে জীবনের দহনবেলার রেশটুকু
শেষ আলোর ইশারা।

সাদিক সাকলায়েন

বিরহ-বিভ্রাট

আমি বিরহের জন্যে ওঁত্‍ পেতে থেকেছি,
ইঁদুরের গর্তের সামনে বেড়াল যেমন
পাহারায় থাকে নিঃশব্দে সচেতন
আর বারবার কোনো এক ভালোবাসা এসে
বাজিয়েছে অকারণ ঘুঙুর বেড়ালের গলায়,
সতর্ক বিরহ ত্রিসীমানা ছেড়ে গেলো সে-ই....

একদিন যেদিন ভালোবাসার জন্য ঠোঁট পেতেছি,
দেয়ালে তৃষিত পোস্টারের মতো অপেক্ষমান থেকেছি
কারো দৃষ্টিগ্রাহ্য হবার আশায়
-হুড়মুড় করে বিরহ এসে, সে
নিভিয়ে দিলো ঢেউয়ের বিকেল!

বিরহ কি জানে না, ভালোবাসা কখনো একবার
ভয় পেয়ে পালালে আর ফেরে না?