প্রেমের আগমনী
শুনছ সুমি ? কাছে এসো,জানলা টা দাও খুলে,
তাকিয়ে দেখো,গাছ্টা কেমন সাদা ফুলে
ফুলে।
শিউলি ফুলের মৃদু সুবাস হাওয়ায় মাখামাখি,
পাশে বসো,আজকে আবার নতুন করে
দেখি।
এমন ই এক শরৎ কালের দিন কি মনে পড়ে?
ফুল তুলতে বেরিয়ে ছিলে,শিশির মাখা ভোরে!
তখন তুমি রাইকিশোরী,মাথায় বাঁধো বেণী।
কাছাকাছিই বাড়ী তোমার,নাম 'সুমি' তা জানি।
জানা ছিল,ফুল কুড়ানী আসবে
ভোরের বেলা,
গাছের তলায় দাঁড়িয়ে ছিলাম,হাতে নিয়ে ডালা।
ভোরের আলোয় ভ্রমর কালো তোমার চোখের তারা,
হানলে যখন আমার পানে হলাম দিশাহারা।
অজানা এক আকর্ষণে রোমাঞ্চিত হয়ে,
ভেবেছিলাম,"পেতাম যদি সুন্দরী এই
মেয়ে।"
এক সাথেতে ফুল কুড়ানো,ভাল লাগার ঘোরে,
এমনই এক শিউলি ফোটা শরৎ কালের ভোরে।
তার পরেতে পাড়ার পূজোয়,মহাষ্টমীর দিনে,
লাল পেড়ে এক হলুদ শাড়ী,মন যে দেখি টানে।
সোনার বরণ হলুদ পাখী,কোথায় ছিলে দূরে,
উড়ে এসে বসলে আমার পাশের ই চেয়ারে।
শুরু হলো,আড় চোখেতে তাকিয়ে
দেখার খেলা,
যাচ্ছ কোথায় ? এখন ও যে লজ্জা তোমার
মেলা!
চোখে চোখে নীরব কথা,মনের কানাকানি,
শূন্য পথে ভাব বিনিময়,প্রেমের আগমনী।
পুরোহিতে বলল হেঁকে,"অঞ্জলি দাও সবে",
তোমার পিছেই দাঁড়িয়ে গেলাম,ফুল হাতে নীরবে।
অঞ্জলি তো আর কিছু নয়,আকুল আবেদন,
রূপ,জয়,যশ দিয়ো মা,দিয়ো পুত্র,ধন।
আমি কি চাই বুঝতে পারি,মায়েরে জানাই,
"হলুদ শাড়ীর রাইকিশোরী চাই মা,আমার চাই।"
মন্ত্র শেষে ফুল ছুঁড়ে দেয়,সবাই দেবীর পায়,
আমার ছোঁড়া ফুল পড়ে যে তোমার ই মাথায়।
আহা ! আবার পালাচ্ছ যে,লজ্জা কিসের এত ?
তোমার কথা পড়ছে মনে,স্পষ্ট ছবির মত।
দিনে ছিল হলুদ শাড়ী,রাত্রে নীলাম্বরী,
নিয়ন আলোর রঙীন ছটায় কিশোরী নীল পরী।
পাগল হলাম মনে-প্রাণে,পেতেই হবে একে,
কইতে হবে মনের কথা,কপালে যা থাকে!
চেনা-জানা,পাড়ার মেয়ে,আছে পরিচয়,
'ভালবাসি' বলতে তবে কিসের এত ভয়?
কাছে গিয়ে বলি - "দেখো,ঠাকুর টা কি ভালো
!"
লক্ষ্য করি,তোমার চোখে যেন খুশীর
আলো।
বললে তুমি - "ঠাকুর ভালো,তাই তো বসে আছি,
আপনি কেন বন্ধু ছেড়ে আমার কাছাকাছ ?"
চমকে বলি - "ভাবছ যে সব,সে সব কিছু নয়,
পূজার দিনে দেখা হলে,বলতে কিছু হয়।"
বললে হেসে - "পাড়ার মেয়ে অনেক গুলোই আছে,
যান না,গিয়ে গল্প করুন,বসে ওদের কাছে।"
এত ফাজিল মেয়ে তুমি,তখন কি আর জানি ?
লজ্জা তে গাল হলো যে লাল,বুকেতে কাঁপুনি।
থতমত খেয়ে বলি - ওরা তো আছেই.....
তার পরে আর বলব কি যে হারিয়ে ফেলি খেই।
বললে তুমি - "আপনি দেখি,এক্কেবারে বোকা,
সকাল থেকে দেখছি শুধু,বসে আছেন একা।
পূজার দিনে ছেলেগুলোর স্ফুর্তি দেখুন মনে,
কেউ কি এমন বসে আছে,বকের মত ধ্যানে ?
বাজি পোড়ান,ঘুরে বেড়ান
প্যাণ্ডেলে-প্যাণ্ডেলে,
বেড়িয়ে আসুন সঙ্গে নিয়ে বান্ধবী কেউ পেলে।
পূজা তো আর রোজ আসে না,সারা বছর ফাঁকা,
চালাক যারা ঘুরে বেড়ায়,বসে থাকে ন্যাকা।"
জানো ? তখন অপমানে জ্বলছিল এ বুক,
নীলাম্বরী,তুমি আমায় দিলে এমন
দুঃখ ?
শুকনো মুখে তক্ষুনি যে ফিরে গেলাম বাড়ী,
আমি ন্যাকা,আমি বোকা,ঠিক ই তো সুন্দরী।
খুব যে দেখি হাসছ হি হি,যেতাম যদি মরে,
তবে কি আর পেতে তুমি,আমায় আপন ক'রে ?
যা বলছিলাম,নবমী তে লাগছিল না যে
ভালো,
বসে ছিলাম এক কোণে-তে,অল্প যেথায় আলো।
রাত পোহালেই দশমী তে মা নেবে বিদায়,
ঢাকের আওয়াজ,আরতি নাচ,সামনে যাওয়াই দায়।
হাসনুহানার সুবাস পেলাম,হঠাৎ অচেতনে,
আবছা কোন মূর্তি যেন আমারই পিছনে।
বললে তুমি- "আলোয় চলুন,পূজো টা কি ভালো !
অন্ধকারে কেন বসে,মুখ টা ক'রে কালো ?
ফুচকা খাবেন ? চলুন না ছাই,ওই দিকেতে যাই,
সারা টা দিন খুঁজে দেখি,আপনি কোথা ও নাই।
মনে হলো,লোকটা যে ঠিক চালাক তো
নয় তত,
কি বলেছি,রাগ করেছে সত্যি বোকার
মত!
পূজোর দিনে কারো মনে দুঃখ দিতে নাই,
হাতটা বাড়ান,এইটা রাখুন,আমি এখন যাই।"
পাজী মেয়ে,ধরিয়েছিলে প্রথম প্রেমের
চিঠি,
তর সয় না,আলোয় গিয়ে আলগা করি
মুঠি।
গোটা গোটা অক্ষরেতে লিখেছিলে তুমি -
"সমর দাদা,তোমায় বড় ভালবাসি আমি।
লেখা-পড়ায় সেরা তুমি,মনে ও তুমি সেরা,
বোকা বলেই ভালবেসে দিলাম তোমায় ধরা।
রাগ ক'রো না লক্ষ্মী আমার,করে দিয়ো ক্ষমা,
থাকলে রাজী,কালকে প'রো হলুদ রঙের জামা।"
সেই ধরালে হলুদ জামা,এখন ও ভুলি নি,
শরৎ এলেই হলুদ জামা আগেই কিনে আনি।
মন টা আজ ও একই আছে,একই তারে বাঁধা,
কালের স্রোতে সুরর্টা কেবল হয় না সঠিক সাধা।
আজ ও আমি স্বপ্ন দেখি,প'রে হলুদ শাড়ী,
সামনে তুমি দাঁড়িয়ে আছ,অষ্টাদশী নারী।
যা চলে যায়,আর কোন দিন,ফেরে না তা জানি,
শরৎ এলেই মনে জাগে প্রেমের আগমনী।