৩০ সেপ্টেম্বর ২০১২

.............................সৃষ্টিশীল প্রতিটি কর্মে দৃষ্টি নান্দনিয়কার প্রভাব রয়েছে , অনুভূতি নিংড়ানো কথার জালে মুগ্ধতার স্পর্শ এনে দিতে অভ্যস্ত সকলকেই আন্তরিক শুভেচ্ছা । সমসাময়িক লেখকদের নিয়ে আয়োজিত সাহিত্য প্রাঙ্গণে অবিরত সৃষ্টি তরঙ্গের উল্লাসে আগ্রহীদের একছত্র অধিকারে এবং অনেকটা ঝিনুক থেকে মুক্তো কুড়িয়ে আনার মতো অগোচরের অসাধারণ কিছু কারিগরের সন্ধানে আক্ষরিকের পদযাত্রা শুরু হয়েছিল । এমন নিঃস্বার্থ , নিরলস উদ্যোগে সহযোগী সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ।

আক্ষরিক শিল্প ও সাহিত্য বগজিন এর প্রথম বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যা প্রকাশিত হলো । প্রথম সংখ্যা প্রকাশের পরপরই দুঃখজনক ভাবে হ্যাক হয়ে যাওয়ার নিন্দনীয় কর্মকাণ্ডের প্রতি আঙ্গুল তুলে একটি কথাই বলা উচিত " আমরা অপ্রতিরোধ্য " । আমরা কোন নির্দিষ্ট গন্তব্য পৌঁছুতে চাই না । সময়ের সাথে সঙ্গতি রেখেই সেই শুরু থেকেই আমাদের মত কেউ ছিলো , আজ আমরাও আছি , থাকব ।

আক্ষরিক এমন একটি সাহিত্য যা সার্বভৌম , আর সকল সংকীর্ণ মানসিকতার ঊর্ধ্বে এক নতুন ধারার সাক্ষর বহনকারী প্রচেষ্টা । বিভিন্ন অপচেষ্টা , অপপ্রচার , ঘৃণিত কর্মকাণ্ডের দুঃসময়ে আমাদের এ দুস্তর পারাপারের একমাত্র খেয়ায় অংশগ্রহণকারী সকল পাঠক , লেখক ও শুভানুধ্যায়ীদের আন্তরিক ধন্যবাদ । আমাদের সাথেই থাকুন , সহযোগিতা , অনুপ্রেরণায় আসুন জেগে উঠি নবধারার শব্দ উৎসবে ।


                                                                                          সম্পাদক
                                                                                         নৈরিৎ ইমু

টোকন ঠাকুর

ডানাওলা কবিতা

জানা নেই, ডানা থাকলে আমি কী করতাম?
বেরিয়ে পড়বার প্রস্তুতি চাপিয়ে ঢাকা শহরে নেমে আসত ভোর, প্ররোচক হাওয়া এসে ডাকনাম ধরে ডাকত: যা তুই...খুঁটে খুঁটে নিয়ে আয় খড়কুটো-ভালোবাসা। হঠাৎ ফিসফিসিয়ে হাওয়া হয়তো কানে কানে সেই প্রাচীন নিয়মাবলিই বলে দিত—একাকিত্বের অসুখ ভেঙে ভালো হয়ে যা। যা তুই বাবুই বংশের ছোট ছেলে হয়ে যা। ওড়াউড়ি বাদ দিয়ে বাসা বুনে বসে থাক, যা। উড়ে আসবে অন্য কেউ, বন্য ঢেউ, যা তুই অন্তরবনের অপেক্ষা হয়ে যা...
ডানা থাকলে সীমানা ভাঙার উৎসাহব্যঞ্জনা থাকত বেশি। একদিন, আমি হয়তো আর বাবুই থাকতাম না। হয়তো শালিক থাকতাম। এই বর্ষায় ভিজে ভিজে বৃষ্টির জলকণা দিয়েই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে টক্কর দিয়ে কবিতা লিখতাম...যদিও, শালিক কোনো কবিতাই লেখে না, কিন্তু শালিক কবিতা হয়ে তুমুল ভিজতে থাকে তরুণ কবির খাতার ভেতর, মাথার ভেতর, সে কবিতা ছাপা হতে পারে লিটল লিটল মেঘে, সেই মেঘই অনুবাদপূর্বক পড়তে পড়তে মুগ্ধ কোনো কুরঙ্গবালিকার চোখে এক ফ্রেম চিকচিক করে ওঠা দুপুরবেলার নদী একটা গল্প হয়ে উঠত...
কিন্তু ডানা থাকলে হয়তো আমি একদিন আর শালিকও থাকতাম না। আত্মপ্রকাশের তরঙ্গে অনেক আথালি-পাথালি আর দ্বন্দ্বে বিদীর্ণ সম্পর্কের অনেক টানা-হ্যাঁচড়ার একটা সফল পরিণতি হতে পারত। এই মনস্তাত্ত্বিক মেটাফর প্রযোজিত ভাবনাচিত্রে শেষ পর্যন্ত আমি ঈগল হয়ে উঠতাম কি না! চরিত্রে দস্যুবৃত্তির অভিযোগ নিতাম কিনা! বুনোঘ্রাণে আমি গোত্রচ্যুত, সব সময়। নিঃসঙ্গতার আততায়ী উপস্থিতি নিয়েও তুলনামূলক দূরত্বসঞ্চারী ঈগলের চোখে এত বিষাদ কেন থাকবে—এর উত্তর লেখা থাকবে না, কোনো কবিতায়, পক্ষীগবেষণায়। মোটামুটি সব্বাই জানে, ঈগলের কোনো অভিমান থাকতে পারে না, ঈগলকে এড়িয়ে গেলেই অন্যান্যের ভালো থাকা হয়। কর্নেল ঈগলকে কেউ চিঠি লেখে না, ই-মেইল করে না, ফোন করে না, ‘কেমন আছ’ বলে না। ঈগল শুধু ঈগল হয়েই ওড়ে, দূরে, ডানা থাকলে আমিও যেতাম উড়ে
আরও কত নামহীন পাখি আছে, ডানা থাকলে আমার হয়তো কোনো নামই থাকত না, অপেক্ষা-বিষাদ দূরত্ব থাকত না...

সরদার ফারুক

 অনুরাধা টেইলারিং হাউজ

এই গলিটার পাশেই ছিল অনুরাধা টেইলারিং হাউজ । প্রকাণ্ড শিরিষ গাছের নিচে লম্বা একটা ঘর । অনেকগুলো সেলাই মেশিনে ঘরঘর শব্দ তুলে নানা বয়সের কারিগর কাজ করে যেত ।ছেলেছোকড়ারা নিচে বসে বোতাম লাগাতো ,ব্লাউজের হুক লাগাতো ।দোকানের পেছনেই কর্মীদের থাকার জন্য এক সারি ঘর ।

অনেকদিন আগে এখানেই আমি দর্জির কাজ শিখতাম ।এতিমখানার শিশুসদনে ক্লাস এইটে আমার রেজাল্ট দেখে সুপার আপা বললেন -“ তোর হবে না , এবার কিছু একটা হাতের কাজ শিখে নে।”
আমরা যারা শিক্ষানবীশ , বেতন-টেতন তেমন কিছু পেতাম না , মাঝে মধ্যে দশ-বিশ টাকা হাতখরচ আর দু’বেলা খাবার ।অনেকটার পেটে-ভাতেই বলা যায় , ভাত মানে মোটা চালের ভাত ।বাজারে যখন যে সবজিটা শস্তা , সেই সবজিটার একরকমের লাবড়া বানানো হতো ।সাথে থাকতো রঙহীন পাতলা ডাল , আমরা বলতাম -কানার চোখের জল ।
হয়তো কিছুদিন একটানা পেপের লাবড়া চলছে , তারপর শুরু হতো পাতাকপির ঝোল । ভাগ্য ভালো হলে কখনো কখনো ঈদের চাঁদের মতো নলামাছের পাতলা একটা টুকরো পাতে পড়তো । সেদিনটা খুব আনন্দের দিন ।

অনুপ দত্ত

সব শামুক শঙ্খ নয়

সব শামুক শঙ্খ নয়
অনেক শামুকের মাঝে
কেউ কেউ শঙ্খ হয় !

কবিতাকে যখন আমি জড়িয়ে শুয়েছিলাম
কবিতা তখন আমায় এ কথা কানাকানি করেছিল
অদ্ভূত লেগেছিল..অদ্ভূত লেগেছিল
যেন দেব সাহিত্য কুটিরের প্রকাশিত বই'এর মতো
সত্য কথা ..সত্য লেখা
সেই এক কবিতার কথা..কবিতার ব্যথা

প্রকাশিত গ্রন্থ সব সত্য হয়না
প্রকাশন সত্য হয়
সমস্ত সত্য দুঃখের সঙ্গে বলে ওঠে..
"ও যে মানে না মানা ...."

সব শামুক শঙ্খ নয়
অনেক শামুকের মাঝে
কেউ কেউ শঙ্খ হয় !
কবিতাকে যখন আমি জড়িয়ে শুয়েছিলাম
একটা ভোর বেআব্রু নিমন্ত্রণ লিপি এঁকে
নীল খাম ছেড়ে যায় তোমার বালিশে
বলে....এক একটা দিন অমোঘ চাবিকাঠি
এসো খুলে দেখি পায়ের ফোঁকরে গাছে অগাছে
ঢুকে পড়ি যৌন সংগ্রহশালায়..রেখে আসি আমাদের মিলন অংশ !

দেখো..সংগ্রহশালা যেন বন্ধ করো না
ভালবাসা যদি আসে !!
রাতের অরাতে..ভালবাসা যদি নীল রং মেখে আসে
অন্ধকার আরো ঘন হোল নীলে কালো মিশে সেত আরো সুন্দে দেখাবে
ধরতে গেলে ভয় হয়--
কাছে টানতে গেলে যদি অন্ধকারে আরো অন্ধকার জুড়ে যায়
সেতো ভয়ানক হবে..পাওয়া না পাওয়া দোটানায় !!
এই ভালো ...জানো..
তুমি আমার ভালবাসা হয়ে সামনে দাঁড়াও
তোমায় দেখি দুচোখ ভরে অনন্তের আলোতে
পৃথিবী জানুক ..আমার ভালবাসা আমার সামনে দাঁড়িয়ে!

পৃথিবী আর কখনো বলবে না..
কে তুমি এই অনুপ দত্ত ?


থানে
১৯/০৯/২০১২
সন্ধে ৭.০০

মেসবাহ মিঠূ

অনন্ত মৃত্যূস্বাদ

যেদিন পৃথিবীর বানিজ্যিক আইন গুলো ছেড়ে
মৃত্যু নামক মহাসত্য কে গ্রহণ করবে
স্হান নেবে প্রকৃতির উর্দ্ধে।

সেদিন ও তোমার প্রাক্তন অবস্হানে গল্প জমবে,
সুউচ্চ অট্রালিকা মাথা তুলে দাঁড়াবে সগৌরবে
আকাশ আড়াল করে।

নিত্যদিনকার মত ধর্ম অধর্ম হবে
নব্য ভালবাসা অনুভবকারী যুবক
রক্তাক্ত হবে।

রক্তাক্ত ভালবাসায় বুকের উঠোন সিক্ত হয়ে
ভালবাসাবাসি জগতে প্রবেশ করবে
অসংখ্য চাঁদ সূর্য।

প্রকৃতি রক্ষায়, প্রকৃতির দাবী পূরণে
অগণিত জীব ধারণ করবে
নারীর জরায়ু।

কেউবা উদগীরণ করবে নতুন জঞ্জাল
কিছু মূহর্ত অনন্ত, অনন্তের ধারক হয়ে
তোমার অনুভূতি তে,

অনন্ত মৃত্যূ স্বাদ......।।

রুদ্র গোস্বামী

অভ্রনীলকে

আমি ভালো আছি অথবা ভালো নেই !
হলুদ সবুজ সব স্বপ্ন গুলোকে বিক্রি করে
একটা স্ব্প্ন উপহার হিসেবে দিয়েছিলাম ,
লাল মিহি এক একটা অনুভূতির নিরেট বুনন।
প্রচুর ক্ষত উপক্ষত উপেক্ষা সহ ;
ফেরত এসেছে আজ দুপুরের ডাকবাক্সে।
কি অসহ্য ফ্যাকাশে তার রঙ !
আমি ভালো আছি অথবা ভালো নেই অভ্রনীল।
পরিচিত নাম ছিঁড়েখুঁড়ে গেছে ঘরোয়া ছেলেটা।
আমার চশমার বাস্প কাঁচে এখন শুধুই জলের দাগ।
তুমি কি এখনও স্বপ্ন বেচো ?
লাল তুবড়ি অথবা মোম মোম রোদ্দুর ?
তোমার আস্তিনে এখনও কি লেগে থাকে,
গোধূলির ডোরাকাটা রঙ ?

বাসরের বধূটির নাকছাবি জুঁইফুল

আলো রঙ
কালো চোখ,
পিঠ ছোঁয়া বেণী চুল।
বাসরের বধূটির নাকছাবি জুঁইফুল।

কানপাশা মণিহার
জলছাপ জ্যোৎস্নার;
ভাঙে কূল,ভরে কূল।
বাসরের বধূটির নাকছাবি জুঁইফুল।

জানালায় বসে দেখে!
মেঘে ঢাকা তারাটি?
ফেলে আসা দিন খোঁজে -
কৈশোর হারাটি!

দুর ছাই
দুর ছাই
কি যে ঠিক,কি যে ভুল!
বাসরের বধূটির নাকছাবি জুঁইফুল।

নৈরিৎ ইমু

অভিশাপ

আমার আদি অন্তঃ অবগত হয়েও
ক্রন্দনরত প্রার্থণা করেছ নামজ্ঞুর !
যতটা তোমাকে মহানুভব ভাবি -
তার চেয়েও বেশী নির্দয় তুমি ।
অতল সমূদ্রসম ভাবনার অসীমত্বে ;
দাবীদার তুমি সর্বত্র বিরাজমান
তবে কী শুনতে পাও না আর্তনাদ ?
কিংবা প্রলাপে নির্গত বাক্য কন্ঠে
কতটা বিষাদ ! কতটা নির্মম !
...
দেখ না তুমি বদ্ধ উদ্মাদ উত্তাল .....।
এই মহিমান্বিত রাতের কসম
তাকেও শূণ্যতার জীবন করো দান
যেমন অপূর্ণ রেখে দিলে আমায় ।
সর্বোত্তম রাতের শপথ রেখে বলি ;
আমার শেষ অস্রু ফোঁটা অচিরেই -
অভিশাপ হয়ে যাবে তাহার তরে ।
আগ্নেয়গিরি উত্তপ্ত লাভা সমেত বক্ষ পিন্জর
জ্বলে যাক , পুড়ে যাক .....
তার ছাইটুকু মুঠো ভরে উড়াবো আমি ।
বর্ষ চক্র ঘুরে ফিরে আসে এই রাত
একই নক্ষত্রের মাঝে পরিচিত চাঁদ
শুধু ফেরাতে পারি নি সেই মন !
আমার অবুঝ অবাধ্য একটা মন ।

রাজীব চৌধুরী

ইকারাসের সমুদ্র পতন

আমার পরিবারের পুরুষ দের মাথায় কিঞ্চিত ছিট আছে। বেশির ভাগই ছিলেন ভ্রমণ প্রিয়- এডভেঞ্চার প্রিয়। উড়ূ ঊড়ু মনের মানুষ গুলোর অনেকেই জীবনের বিশাল একটা সময় কাটিয়ে দিয়েছেন ঘুরতে ঘুরতে।যেমন আমার দাদির মুখে শুনেছি আম
ার দাদা ছিলেন বিশাল জমিদার। কিন্তু কি এক নেশায় তিনি চলে যান বার্মায়। সেখান থেকে আর ফেরেন নি তিনি। কেউ এখনো জানেনা উনার কিভাবে মৃত্যু হয়েছে- কোথায় দাফন হয়েছে। আমার দাদুর বাবা ও ছিলেন জমিদার। তিনি জন্ম সুত্রে জমিদারি পেয়েছিলেন। সেই আমলে তিনি প্রায়শই সাধারণ বনিক দের সাথে খামোখাই যুদ্ধ বিগ্রহে জড়িয়ে যেতেন। আবার উনার ছিল শিকারের নেশা। সেই একবার এক বাঘ শিকার করতে গেছিলেন সমতট জংগলে। আর ফিরে আসেন নি তিনি। তাঁর আগের লোকজন দের কথা আমি জানিনা। তবে শুনেছি সম্রাট জাহাঙ্গিরের আমল থেকে আমাদের পরিবার এই বঙ্গ তথা বাংলাদেশে।সেই সময় সাহসিকতার জন্য আমাদের পরিবার কে দেয়া হয়েছিল চৌধুরী উপাধি। আরেকটা উপাধি ও আছে। সেটা হল ছিট পরিবার। আমাদের পরিবারের সব পুরুষের মাথায় সামান্য পরিমান ছিট থাকার কারনে এই উপাধি দিয়েছে আমাদের পরিবারের ই নারী কুল।

ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত

দেখ বাড়িয়েছি হাত

পাইন বনের ওপর
তারা ভরা নীল আকাশে
প্রকৃতির মৃদু আঁধারে
গাছ মাটি আকাশ;
চুরমার হচ্ছে স্মৃতি,
আকাশ ভেঙে তোলপাড়
অজস্র কালো পাথর
ছুটে আসে মাটিতে,
প্রবল হাওয়ায় দিকভ্রান্ত মুখে আছড়ে পড়ে
নিজেরই এলোমেলো চুল।

ললনার নাচ থেমেছে আগেই,
থেমেছে পাখীর ডাক গানের কলি,
নিঃশ্বাসে বইছে শুধু গভীর বাতাস।

পুরুষের চোখ খুঁজে পেয়েছে তাকে,
শরীর শিউরে ওঠে ভয়ে কামনায়,
ঠাণ্ডা স্রোত নামে শিরদাঁড়ায়
সে চোখ সর্বাঙ্গ লেহন করে
অদ্ভুত স্পর্শহীন ধর্ষণে।

ভয় পেয়ো না নারী,
শক্তির আধার তুমি
আমার কিছু জমা কাজ
একা একা হাঁটার বাকি অনেকটা পথ দূরে সরিয়ে
দাঁড়িয়েছি পাশে দেখ বাড়িয়েছি হাত।

রোখশানা রফিক

কান পেতে শোনো

বুকের ভেতর ধুকপু্‌ক, ধুকপুক......কান পেতে শো্নো।
আর একবার কান পাতলেই শো্না যাবে নিঃশ্বাসের শব্দ।
তারচেয়ে আরও সন্তর্পনে কান পেতে শো্না.........
পাহাড়ী খাদে বাতাসের শন্ শন্ আনাগো্না,
যুগল হংসমিথুনের ডানা মেলার শব্দ,
একটানা বাতাসে লাল-সবুজ নিশানের পত্ পত্ ওড়া,
গুনগুন গুঞ্জরনে ব্যস্ত মৌ্মাছির ফুলে ফুলে মধু আহরন,
শেষ বিকেলে ভ্রমরের আনাগো্না, শরতের কাশবনে
শিশিরবিন্দুর টুপটাপ ঝরে পড়া, ভরা মাঝগাঙে
ঢিল ছোড়ার শব্দ, ইদুরের খুটখাট, ময়ুরের পেখম মেলা,
উইলো্র ডালে ডালে রমণীর ক্রন্দন, চঞ্চল খরগোশের
কচকচ ঘাস চিবানো্র শব্দ, ব্যাঘ্রের আগমনে বানরের
কিচমিচ আর মায়া হরিনের সশব্দ পলায়ন,
অগনিত ঢেউয়ের তী্রে আছড়ে পড়ার ছলাৎ ছলাৎ ছল,
একাকী উদাস দুপুরে ঘু-ঘু ডাক, কৃষ্ণচূড়ার ডালে
কো্কিলের কুহুতান আর রক্তজবার ঝোপে চড়ুই পাখির
কিচির মিচির, মেরুভল্লুকের বরফজলে থৈ থৈ সাতার,
নদী্র ভাঙ্গনে মাটির ঝপাৎ আওয়াজ আর সবশেষে
বেসিনের নষ্ট কলে জল পড়ে টুপ্-টুপ্।

আরও আরও গভী্রে কান পাতলে কি যায় শো্না
রঙধনু রং প্রজাপতিদের ডানা মেলার মৃদু শব্দ?
পৃ্থিবীর জলের মেঘ হয়ে আকাশে ভেসে চলার মন্থর ধ্বনি?
আপেলের সুরভিত গো্লাপী পুষ্পের কুঁড়ি মেলার
কিংবা চেরী ফুলের অবিরাম ঝরে পড়ার শব্দ?
...............কান পাতো, কান পাতো,
আরও গভী্রে সন্তর্পনে কান পেতে শো্ন
মায়াবী এ পৃথিবীর এইসব মোহনীয় শব্দাবলী।।

শুভ্র নীল

অনুগল্প সমগ্র-

১.মইনের বাসার বারান্দাটা বেশ বড়, প্লাস্টিকের একটা মোড়ায় বসে সুন্দর আকাশ দেখা যায়। ইদানিং এখানে বৃষ্টি হচ্ছে খুব সারাবেলা। বারান্দায় বসে হাজার রকম ইচ্ছা-অনিচ্ছার ছবি আঁকে মইন। সামনের ছয় তলার বারান্দার তারে ঝুলিয়ে রাখা কাপড়ের মালিকিনকে দেখতে ইচ্ছে হয় তার। কিন্তু কখন যে কাপড় দিয়ে যায় আর কখন নিয়ে যায় টের পায়না মইন। কিংবা তিন তলার সেই নিঃসঙ্গ তরুণীটির সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে যে কিনা অলস বিকেলটা একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। জানতে ইচ্ছে করে তার বিষণ্ণতার কারণ। এই ইচ্ছেটাও অনিচ্ছায় রূপ নেয় যখন তরুণীর বাচ্চাটি হঠাৎ পেছন থেকে এসে দু হাত দিয়ে চোখ ধরে বসে মায়ের। মইন ইচ্ছে বদলিয়ে ভাবার চেষ্টা করে সেই মেয়েটির কথা, যে তার বারান্দার দরজা অল্প একটু খুলে দ্রুত ওড়নাটি নিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়, আর খানিকক্ষণ বাদে লাইট বন্ধ করে জানালার পর্দার ফাঁকে খুঁজতে থাকে। তখন মইনের চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয়, এই যে আপনি লজ্জা পাবেন না, আমি আপনার কোন দেহ আবয়ব দেখিনি। শুধু বুঝতে পেরেছি আপনি কম সময়ে ওড়নাটি নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। আপনার কোন দোষ নেই। আড়াল থেকে আমাকে দেখার কিছু নেই। দেখতে হলে দরজা খুলে বারান্দায় আসুন। রাতে ইলেক্ট্রিসিটি যখন চলে যায় কারো সাথে বাসার নিচের রাস্তায় হাঁটতে ইচ্ছে করে তার। ওপাশের বিল্ডিং এর থলথলে শরীরের বাল্য বন্ধু ইশতিয়াকের কথাও ভাবতে ইচ্ছে করে। ব্লেড দিয়ে বন্ধুকে খুন করার কথা প্রায়ই ভাবে সে। এককালের সমাজতন্ত্র বলতে বলতে শাহবাগ চত্বরে মুখে ফেনা তুলে ফেলা ইশতিয়াক আজ পুঁজিবাদী কর্পোরেট সমাজের অধিপতি, তাই? না। শিরিনের কথা মনে করতে চায় না মইন। তারচেয়ে সামনের ছয় তলার বারান্দার তারে ঝুলিয়ে রাখা কাপড়ের মালিকিনকে দেখতে ইচ্ছে হয় তার।

সাইদুর রাহমান মিলন

বুকে আমি তোর কষ্ট হবো

কষ্টেই যদি কর্ লি নষ্ট
কান খুলে শোন্, পষ্ট কবো -
বুকে আমি তোর কষ্ট হবো !

 
করলি নষ্ট, বললি ভ্রষ্ট !
কষ্টই দে ! নষ্টই হবো !

 
নষ্ট বীজের কষ্ট ফসল
ফলাবোই করে জবর দখল
বুক জমি তোর !  
শপথ এ মোর !

কষ্টকে ভালবাসা শেখাবো !

নষ্ট এ আমি, কষ্ট এ আমি,
সুখেতেই, তোর বুকেতেই রবো !

বুকে আমি তোর কষ্ট হবো !!

কাসাফাদ্দৌজা নোমান

খোঁজ

হাঁটতে হাঁটতে পায়ের লিগাম্যান্ট বোধহয় ছিড়েই গেল। না জানি কপালে আরও কথা হন্টন আছে।“সাগর বাইন্ডিংস” খুজছি গত এক ঘন্টা যাবত। বাবার বন্ধুর দোকান। বড় বোনের বিয়ের দাওয়াত পৌছে দিতে হচ্ছে এটা ভেবেই কষ্ট লাগছে। বিয়ের দাওয়াত দিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত না আবার নিজের কুলখানীর দাওয়াত দিতে হয়! এই মোবাইলের যুগে বিয়ের দাওয়াত স্ব-শরীরে পৌছে দেয়ার কি দরকার মাথায় ঢুকছে না। বাবারা পারেও বটে। গত বাইশ বছর বাবার সাথে তার বন্ধুর কোন যোগাযোগ নেই অথচ নিজের মেয়ের বিয়ের দাওয়াত দিতে হবে। তাও আমাকে এসেই দিতে হবে। অবশ্য কিছু করারও নেই। বাবা শাররীক অবস্থা যা আসা একেবারেই অসম্ভব। “ওই ভাই সাইড দ্যান”। হাঁটতে হাঁটতে রাস্তা পুরো দখল করে নিয়েছিলাম।

আলী রেজা

পাড়ে যাওয়ার ইচ্ছা

এই নগরে কতগুলি চিহ্ন আছে যার কোনো মানে নাই
ঠিক তেম্নি কতগুলি মানুষ আছে যারা চিহ্নের ইঙ্গিত বোঝে না
আমি কোন দলে পড়ি জানতে পারিনি, শুধু তোমাকে মগজটা
খুলে দেখতে দিয়েছিলাম, প্রয়োজনে ধোলাইও দিতে পার
তুমি তার প্রতিটি প্রকোষ্ঠে বেশুমার রোদ্রকণা আর কটিতে
দেখতে পেলে নগ্নপদ বৌদ্ধের মহিমাপুবদুয়ারি কুঠুরিতে
আগিলা জামানার পাকুড়গাছ তার চৌদিকে নিশুতি রাত
জখমি চাঁদের নিচে জ্বলতে থাকা জোনাকির হাট,
পাতার আড়ালে পাখিদের মুচকিহাসি ভেঙ্গে
পাল তোলা ট্রেনের অন্তরের দেশে যাওয়া আসা
ভাদ্রের তপ্ত গরমে আকাশে কালো কফির ঢল
গুদারার ছলাৎছল মরাকটালের হন্তারক কলস্বন,
কোনো চিহ্ন থাকেনা প্রান্তরের বালিয়াড়ির, না নদী না
নয়ানজুলি শুধু পাড় ছুঁয়ে থাকি পাড়ে যাওয়ার ইচ্ছায়

পদ্য প্রলাপ

[]
বিস্ময় কাটে না
পথ ছিঁড়ে গেছে পদাঘাতে
পথের রেখায় জ্যামিতিক বক্রতা
হুইসেলে ভর করে রেলের দ্রুতি
গন্তব্য দুরে সরে যায়

[]
করপুটে পিঁপড়ার ডিম
শিউলির স্তুপে
ঢাকা পড়ে গেছে
স্নানরতা কুমারীর স্তন
ঝর্ণার দেহ ভেঙ্গে নদী নামে
পাহাড়ের নিতম্বে বিভঙ্গ নদী

[]
বৃক্ষের কাছে ঝুঁকে দেখি
বারুদের গন্ধ নাই
মানুষের ত্বকের ভিতরে
বারুদের প্রলিপ্ত পেলবতা
কলঙ্কের কল্কী ভেঙ্গে
ছনার ধোঁয়া ওঠে
পত্রমোচি বৃক্ষের আড়ালে

[]
ঘাসে কোনো চিহ্ন নেই
পাঁচজন ফিরিস্তার হানাদারি
পাঁচইঞ্চি দেওয়ালে হরেক ড্রিলিং
কিভাবে ভাল থাক পিচুটি জড়ানো চোখে?

[]
ছোবলের রসায়ন এখনো অনায়ত্ত
কচুপাতার পানির প্রগলভ চঞ্চলতা
বালিকার আডষ্ট বুকে-
সাপ-লুড়ু ভেবে ছক্কার চাল দিতে পারো
ভুল সুরে ফুঁ দিতে পারো অনিবার্য মোহে

রাজন্য রুহানি

শেষ গান, জন্মের আগে

আঙুলে আঙুলে ধরে রাখি মহাকাল মায়া;
ঘুড়ি ওড়াবার আয়োজনে
লেখাপত্র লেজ বানাই-- আকাশের সখি
সুতায় মাঞ্জা দিয়ে দিগম্বর দাঁড়িয়ে ঠায়
জলকেলি... কামকেলি... নাহ্
বর্ষা মৌসুমে
টেংরাপুঁটি চোখ মারে হিজলের ছায়ায়,
এত্তো এত্তো সোনারোদ
বুনো মহিষের পালে শোভা...
কী ঠাণ্ডা-গরমে শরমে ভাজ খুলি না
কৌমার্যকাল
বসন্তের রূপছায়া... ধূপছায়া... ধুত্তেরি...

অনশন ভাঙি না; তবু ব্যবহারে
বিপন্ন বোধের খইফোটা আকাশে খোল-করতাল
কী প্রাকৃতিক আহা !
দেদার দৈন্যদশা দেয়ালের উল্টোপিঠে:

কারা যেন রক্তের দামে লিখে গেছে দাবি;
পরিবর্তনের স্বরচিত মন্ত্র-- সভ্যতার

সিপাহী রেজা

ধ্রুব

কখনো ভাবিনি এমন করে, ঠিক এমন করে
তুমি আমি কোন এক জংশনে মিশে, আবার
কোন এক সবুজ আলোর ইশারায় হর্ন বাজিয়ে,
চিরস্থায়ী সমান্তরাল দূরত্বে, বয়ে যাব
অতীত পেড়িয়ে বর্তমানের স্টেশনে
ভাবিনি, রাতের অর্থহীন আলোর মাঝে
বলিষ্ঠ নিরবিচ্ছিন্ন একাকীত্বে
উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে জেগে থাকবো বহুদূরে,
অথচ অতি নিকট এক মহাশুন্যে
 
ভ্রমণের রুপকথা

আমাকে আবারও বলতে হলো দীর্ঘশ্বাস তুমি দীর্ঘজীবী হও !
তোর উষ্ণতায় বরফ কেটে যাক মৌন শহরে
শুনেছি-
ঘোরের স্টেশন থেকে একটা মেইল ট্রেন ছেড়ে যায় বহু রাতে...
আমি তার চলন্ত জানালায় মন রেখে, আবৃতি করবো বিগত সফর,
অন্ধকারে যতদূর আলো ফেলে যায় উৎসুক চোখ, তারও কম দূরে-
বয়ান হয়ে যাক, কিভাবে-
ডুব মেরে একটা জোনাকি, একটা ইচ্ছে, হয়ে যায় পরিপূর্ণ দীর্ঘশ্বাস !

মাত্রাবিহীন অক্ষর



এখানে পোড়া মাটির লাল দাগ ধুয়ে দেয় যাবতীয় ময়লা
মুখের ভিতর হতে অন্তরের চারপাশ
এখানে,
শুদ্ধতম সূর্যের প্রথম কিরণ হতেই তাদের যাত্রা শুরু
সকালে হেঁসেলের সোঁদা গন্ধও যেন তাদের অনুপ্রেরণা!

 
হ্যাঁ,আমি সবুজ কিংবা সরল অংকের মত জটিল কিছুকে নয়
সামান্য গ্রাম্য কিছু মাটির শিল্পকর্মের কথা বলছি
শরীর পর্যাপ্ত শুঁকনো কিন্তু ফেটে যাবার মত নয়, এমনকি-
গাত্রে বিদেশী রঙের আচ্ছাদন নেই তবুও দৃষ্টিনন্দন

তাদের হাত, খড়খড়ে চৈত্রের জমি হলেও সেখানে আছে মাটির মততা
আছে ছেলের স্পর্শ, মেয়ের আবদার জড়ানো আহ্লাদ
গামছায় মোড়ানো দুপুরের ভোজন রসিক যে কৃষাণ, তার অন্তরেও আছে
সামান্য রসিকতা, কিছুটা সস্তা ধরনের প্রেম
সে প্রেম মৃগনাভীর মতই ছড়ায় উর্বর নগরায়নের সুগন্ধি!

পরিচিত রাস্তা হয়ে প্রতিদিনের যাতায়াত কখনো রাখাল, কখনো কৃষক
কখনো গেঁদার বাপ, কখনো বাজান, কখনো তাসের পাকা জুয়াড়ি...
তার আপাদমস্তক জুড়ে যাত্রাপালার অদৃশ্য পোশাক, মেকআপ
তাকে সবসময় চুপ করিয়ে দেওয়া হয়, কারন তার রোল স্বল্পভাষী!
তাকে ক্ষুধার্থ থাকতে হয়, কারন যাত্রার দৃশ্যপট দুর্ভিক্ষের!
তার মুখে কিছুটা দুশ্চিন্তার আগ্রাসন, কারন সময়টা অনাবাদির!
গর্ভবোধ বলে কিছু থাকতে নেই, কারন তারা মাত্রই মাটির পুতুল!


 

জবরুল আলম সুমন

ভেসে যায় বৃষ্টির জলে

সময়েরা এতো দ্রুত পালায় কেন ? সময়েরা কি স্থির থাকতে জানেনা ? দেশে বিদেশে কত শত অদ্ভূত আইন কানুন তৈরী হয় মানুষের মধ্যে শৃঙ্খলা বোধ তৈরী করার জন্য, আচ্ছা এমন কি কোন আইন তৈরী করা যায়না যে আইনের বলে সময়েরা স্থির হয়ে থাকবে, একটুও নড়া চড়া করবেনাযদি তাই করা যেত তবে হয়তো সোমা'কে কেউ আর ঘরে আটকে রাখতে পারতো না চোখের বেড়া দিয়েএকটু একটু করে পালিয়ে যাওয়া সময়েরা সোমার সবটুকু শৈশব চুরি করে নিয়ে গেছে আর সেই সাথে হাতে ধরিয়ে দিয়েছে কৈশোরের টিকিটসোমা আজ চৌদ্দ বছরের এক বাড়ন্ত কিশোরীতার বয়সটাই বলে দেয় সে আর আগের মতো নেই, তাকে এখন শাসনের বেড়াজালে থাকতে হয় প্রতি মুহুর্তসে কোথায় দাঁড়াবে, কোথায় বসবে, কোন দিকে তাকাবে, কোন পথে হাঁটবে তার সবটুকুই এখন মা'য়ের সিদ্ধান্তে করতে হয়ওড়নাটা গলায় পেঁচাবে নাকি শরীরে জড়িয়ে রাখবে তাও মা ঠিক করে দেনআচ্ছা মায়েরা এমন হয় কেন ? তারা কি এই সময়টুকুন পার করে আসেনি যে সময়ের ভেতর দিয়ে এখন সোমা পার হচ্ছে ? তবে তারা কেন বুঝতে চায়না এই বাড়ন্ত মনের ভিতরে রোজ রোজ কত স্বপ্ন বেড়ে ওঠে, স্বপ্নের ডাল পালা মেলতে না মেলতেই মায়েরা কেন তা শাসনের কাঁচি দিয়ে ছেটে ফেলে, কেটে ফেলে ? এই ত মাত্র ক'বছর আগেও, কত বছর, পাঁচ কিংবা ছয়যখন সোমা একটা হাফ প্যান্ট আর হাত কাটা পাতলা গেঞ্জি পরে টেলিভিশনের সামনে বসে কার্টুন দেখতো ঠিক তক্ষনি রান্না ঘর থেকে মা ডাক দিয়ে বলতো "সোমা, যা ত মল্লিকের দোকান থেকে তোর বাবার কথা বলে হাফ কেজি মশুর ডাল নিয়ে আয়, শুধু ডাল নিয়ে আসবি সাথে যেন ক্যান্ডি ফ্যান্ডি না আসে" তখনো কিন্তু মা বলেনি 'সোমা, দোকানে যাওয়ার আগে গায়ে ওড়নাটা জড়িয়ে নিয়ো' সেই মা এখনো রান্না ঘর থেকে ডাক দেয় তবে মল্লিকের দোকানে যাওয়ার জন্য নয়, সময়ে অসময়ে যেন বারান্দাতেও পা না বাড়ায় তার জন্যসোমা কখনোই তার মায়ের ইচ্ছের বিরুদ্ধে যেতে পারেনা, তাই মায়ের নিষেধ উপেক্ষা করে বারান্দাতেও যাওয়া হয়না যখন তখনঅথচ তার ভেতরটা এক মুহুর্তে চার দেয়ালের চৌকাঠ মাড়িয়ে চলে যায় বাসার ছাদে, উঠোনে কিংবা গলির মাথার ওই খেলার মাঠটাতে যেখানে পাড়ার অন্যসব ছেলে মেয়ে স্কুল শেষে এক জোট হয়ে হরেক রকমের কত খেলায় মেতে উঠে

কচি রেজা

পাতাঝরার গল্প

এক একটা মহাদেশ জলে পড়ে যাচ্ছে
জল উড়ে যাচ্ছে ডলারের মত
আমি তাকে জলের দামে কিনে
ইঁদুর হয়ে কাটব চশমা

নির্জনে কোমরে হাত দিয়ে
নাচঘর থেকে টেনে নিয়ে গেছ
তালুতে চেটেছ যারা একা থাকা নাভী
জানিয়ে দিই, আগামীকাল তার বিবাহ

এইসব বীজানু চোখ থেকে খুলে
ভরদুপুরের সাথে ঘুমাবে সে এখন
ঘুমগুলো চোখ ছাড়া ছিল
চোখ গুলো দুপুর ছাড়া ছিল

রেল লাইন থেকে অতীতের তুষার সরে গেলে
পাতাঝরার গল্প নিয়ে চলে যাবে ট্রেনগলো

আব্দুল্লাহ্ জামিল


ব্যকুল হৃদয়

হিমেল হাওয়া শির শির
দখিন বাতাস ঝির ঝির
পাতার শব্দ মর মর
খড়ের শব্দ খর খর
বতাসের সুর শন শন
ভ্রমরে গুঞ্জে  ভন ভন
ফাগুন ফোটে ফুল ফুল
নরম শরীর তুল তুল
মুকুল গন্ধে মৌ মৌ
মধুর খোঁজে কেউ কেউ
মেঘের দেশে ঘুরে ঘুরে
চিলেরা যায় উড়ে উড়ে
আকাশে মেঘ গুর গুর
বুক যে কাঁপে দুর দুর
দিবা স্বপ্নে বারে বারে
মন ভরে তাই সুরে সুরে
কে যেন চায় ফিরে ফিরে
ব্যকুল হৃদয় বারে বারে

রেজওয়ান তানিম


আশার কথা বলি

এই পথে, যেখানে রাত ছিল অপার্থিব আলোর খেলায় মত্ত, সেখানে এখন ধূসরতাআলো নেই, ধুলো নেই, জনমানব কিংবা যানজট কিচ্ছু নেই এখনশূণ্যতার এই পথেই তোমাকে যেতে হবেস্ট্রীট লাইট বিহীন এই বিরান বিষাদ সড়ক, তোমার অন্তিম পথ হয়ে দেখা দেবে কিনা জানতে চায় পৃথিবীর নামের কুচক্রী বুড়িটা

তুমি হাঁটবেপাথুরে এই রাস্তাটুকু, তোমার পদস্পর্শ পাওয়ামাত্র মেলে ধরবে নগ্ন অভিশাপওইপাশে বেঁধে রাখা কালো শ্বাপদের মূর্তিগুলোয় অগ্নিবাণ আসবে, প্রাণ প্রতিষ্ঠিত হবেশোনা যাবে নগ্ন হুংকার, শেকল ছিঁড়ে গেলে পশুত্ব প্রকাশ হয়ে পড়বে রূঢ়তার সবটুকু নিয়ে

ওরা উন্মত্ত হয়ে উঠবে, সলাপরামর্শ করবে কামড়ের প্রক্রিয়া নিয়ে, বিমর্ষ তোমার চোখে দেখব আর্তির ভাষা, খুব স্বাভাবিক একবুক আতঙ্ক, জলাতঙ্ক কিংবা মৃত্যু রোধের আগাম প্রস্তুতিটুকু!

চোখ বুজে সবশেষ ভেবে হেরে যেও না মেয়ে, সবশেষ হয়ে যায়নিআমাদের তখন অবাক হবার সময়আমরা বিস্ময় নিয়ে দেখব, আশাবাদী চোখে- এর মাঝেই, এই ভ্যাপসা অস্বস্তির অস্থিরতার মাঝেই, অনতিদূরের বনানীতে নেমে আনবে প্রগাঢ় শান্তির করুণা ধারাআধখানা চাঁদ অন্ধকারের সীমান্তের কাছাকাছি ওই আকাশের বুক চিড়ে উঠে আসবে গলে যাওয়া বেদনাটুকু বুকে নিয়েস্বপ্নের নীলে স্নান দিয়ে সে দূর করবে অনাবশ্যক অন্ধকারখয়েরি শালের বনে ফুটবে বুনোফুল, জঠর জ্বালায় পুড়ে অঙ্গার, বিকারগ্রস্থ শকুনের তির্যক হলুদাভ চোখ;

ভাগাড়ের মাঝেই খুঁজে পাবে বেঁচে থাকার রসদ!

তুমি যাবে কি হেটে হেটে, এই পথে, সেই রূপকল্পের কাছাকাছি, বিষাদ পুরাণের জন্মসড়ক থেকে, আনুভূমিক জীবনের খোঁজে!

কবিতা: আশার কথা বলি

 

 
অপরাজিতার পাঁচটি পাপড়ি

আলোটুকু ফিরিয়ে দিও, ছায়াটুকু থাক
তোমার পেয়ালা গালে
তৃষিত সূর্য তেজ বড়ো বেদনাময় হবে
সানস্ক্রিন প্রেম তাই
দিয়ে যাব আমি, প্রতিদিন ঝাঝাদুপুরে!


প্রতিটি নিমেষ বয়ে যায় নিশ্চুপ;
কেউ কেউ রেখে যায় কালচে পোড়া দাগ!
খুব বেশি গভীর, অথচ জীবন্ত
জীবনের এন্টিলজিক্যাল ক্ষতগুলো


শব্দবালকের হাতে গোলাপের পাতা
গোলাপ পাতায় সাতটি রেখা
সাতটি রেখা পাখনা মেলুক
পাখনায় লাগুক আট রঙা রংধনু !


পোড়াবই যখন, রক্ত পানি করা কষ্টের দামে
পোড়াই নিজেকে;
বেদনার অমর্যাদা হয় সস্তা অগ্নিশলাকাতে!

আমি তো এখন মৃতপ্রায়
লিভিং ফসিল এক
আমার সাধনায় লেগেছে জন্মান্তরের ঘুন
মড়ক লেগেছে কথা ও কবিতায়!