প্রবাসীর কলাম
----------------এসব দেখে আমার মনে
হয়েছে, এরা জাতি হিসাবে অত্যন্ত সৎ মানিসিকতার। আর চুরি-ডাকাতি কিংবা
অন্যান্য অপরাধের হারও আশ্চর্য্কমভাবে কম এখানে।
আত্মীয়-পরিজন , স্বদেশ ছেড়ে দক্ষিনমেরুর প্রান্তে এই দেশকে মনে হয় দ্বিতীয় মাতৃভূমি। এখানে বর্ন -বৈষম্য ও খুব কম। স্বদেশের বিয়োগব্যথা অনেকখানিই ভুলিয়ে দেয় এখানকার সুন্দর প্রকৃতি ও মানুষজনের সততা।
কুচি কুচি বরফঝ্রারা কনকনে ঠান্ডার দিন শেষ। শুরু হয়েছে বসন্তের
আগমনে গাছে গাছে নতুন কিশলয় আর ফুলদলের সমারোহ।দক্ষিন মেরুর নিকটবর্তী দেশ নিউজিল্যান্ডের প্রকৃতিতে সবুজের
সমারোহ চোখ জুড়িয়ে দেয়। ছবির মতো ছিমছাম নিপাট ঘরবাড়ি আর পরিচ্ছন্ন পরিকল্পিত রাস্তাঘাটে ফুটেছে নানা বর্নের
কতো নাম না জানা ফুল। ডুনেডিন শহরে আমার সদ্য কেনা বাড়িটির যে প্রান্তে বসে আমি লিখছি , তার ঠিক সামনেই প্রাকৃতিক লেকের জলে সাতার কাটছে ৮/১০ টি বিরল
প্রজাতির ব্ল্যাক সো্যান। আর সেই সাথে সী-গালের ঝাঁক দ্রুতগতিতে উড়ে এসে টুপটাপ জলের উপর
পড়ছে আর ডুব দিতে দিতে গোসল সেরে নিচ্ছে। অন্যান্য জলচর পাখিও আছে তাদের সাথে, যাদের নাম আমার জানা নেই।
দৃষ্টি আরো কিছুদূর প্রসারিত করলে দেখা যায়
সবুজ পাহাড়ের বুকে হলুদ ফুলের বিস্তী্র্ন সমারোহ। আর, সবুজেরও যে কতো প্রকারভেদ হতে পারে তা এখানে না এলে বিশ্বাস করা যায় না। এমনকি এখানকার ঘাসফুল
গুলোও বিচিত্র বর্নিল। স্থানে স্থানে পাইন, ফার, বার্চ, বনঝাউয়ের সুউচ্চ শিখর
ছাড়িয়ে দৃষ্টি প্রসারিত করলেই দেখা যায়, পাহাড়ের বুকে
চড়ে বেড়াচ্ছে পোষা ভেড়ার দল।কোথাও কোথাও ঘোড়ার আস্তাবলের পাশে ঘাসে মুখ ডুবিয়ে আহারে ব্যস্ত
দু'চারটি ঘোড়া।
এতো গেল প্রানীকুল আর প্রকৃ্তির কথা। সেইসাথে এখানকার মানুষজনের
সততার কথা না বললেই নয়। আমার দখা ঘটনা, বাড়িভাড়া নেবে বলে সম্ভাব্য ভাড়াটিয়া গেছে
বাড়ি দেখতে। দোতলা বাড়ির নীচতলায় লন্ড্রী্রুম। যেখানে খাড়াখাড়ি মই লাগানো সিড়ি বেয়ে নামতে হয়। তো বাড়িওয়ালা নিজেই
বলে দিচ্ছে," এই সিড়িটা কিন্তু খুব বিপদজনক। আমি একবার পড়ে গিয়েছিলাম
এখান থেকে।" অর্থাৎ ভাড়াটিয়ার কাছে সত্য লুকানোর কোনো প্রয়াস তার নেই।
আর
একটি ঘটনা, পরিচিত একজন ইন্টারনেটে অনলাইন বিজ্ঞাপন দেখে
একটি কফি টেবিল ৩০০ ডলারে কিনবেন বলে গেছেন দোকানে। দোকানী তাকে বললেন, " ৩০০ ডলারে শুধু একটি বড় টেবিলই নয়, সাথে দুইটি সাইড টেবিলও আপনি পাবেন।" অথচ আমাদের দেশে হলে এই দুইটি সাইড টেবিল আলাদা ভাবে বিক্রি
করা হতো।
আমার
আরও দেখা, একজনের পকেট থেকে দামী একটি মোবাইল সেট পড়ে
গেছে বাসের ভিতরে। ভদ্রলো্ক খেয়াল করেননি। বিকালে সেই নাম্বারে ভদ্রলো্ক ফোন করে খোঁজ নিলেন মো্বাইলটা
ভুলে অফিসে ফেলে এসেছেন কিনা। কেউ ধরলোনা ফোন। পরদিন সকালে যে নাম্বার থেকে মো্বাইলের খোঁজ করা হয়েছে সেই নাম্বারে
বাসের চালক ফোন করে জানালেন, মো্বাইলটি বাসের ভিতরে
পাওয়া গেছে, ভদ্রলো্ক যেন নির্দিষ্ট একটি ঠিকানায় গিয়ে
মোবাইলটি ফেরত নিয়ে আসেন। সচরাচর এখানে একটি চাবির রিং ও যদি রাস্তাঘাটে পাওয়া যায় তবে
তা নিকটস্থ পুলিশ ষ্টেশনে জমা দেয়া হয়।
আরেকটি কথা, নিউজিল্যান্ডারদের আরেরক নাম "কিউয়ি"। কিন্তু কিউয়ি পাখি এখানে খুব কম দেখা যায়। শুনেছি পাখিটি নিশাচর
এবং বিরল। তবে বাজারে কিউয়ি ফলের সমারোহ চোখে পড়ে। এখানকার বাজারে সবুজ শাক সবজি অত্যন্ত মূল্যবান। কাচা মরিচের কেজি কখনো
কখনো ১০০ ডলারে পৌছে। যা আমাদের দেশে হলে রীতিমতো হৈ চৈ পড়ে যেতো।এককেজি কমলা ২ ডলারে পাওয়া গেলেও টমেটোর দাম তারচেয়ে ৭/৮ গুন
বেশী। আর, এখানকার খাবার দাবার ভেজালমুক্ত, তাই নিশ্চিন্তে খাওয়া যায় সকলকিছুই।
আত্মীয়-পরিজন , স্বদেশ ছেড়ে দক্ষিনমেরুর প্রান্তে এই দেশকে মনে হয় দ্বিতীয় মাতৃভূমি। এখানে বর্ন -বৈষম্য ও খুব কম। স্বদেশের বিয়োগব্যথা অনেকখানিই ভুলিয়ে দেয় এখানকার সুন্দর প্রকৃতি ও মানুষজনের সততা।
কিন্তু
এখানে কর্মসংস্থান খুব কঠিন। যারা এখানে বিদেশী হিসেবে আছেন তাদের বেশিরভাগই ছাত্র/ছাত্রী। চাকরীক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ডারদেরকেই
প্রাধান্য দেয়া হয়। সুতরাং, যারা এদেশে আসতে চাইবেন তারা কর্মসংস্থানের
খোঁজ খবর নিয়েই আসবেন আশাকরি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন