৩১ অক্টোবর ২০১২

রোখশানা রফিক

প্রবাসীর কলাম

কুচি কুচি বরফঝ্রারা কনকনে ঠান্ডার দিন শেষশুরু হয়েছে বসন্তের আগমনে গাছে গাছে নতুন কিশলয় আর ফুলদলের সমারোহদক্ষিন মেরুর নিকটবর্তী দেশ নিউজিল্যান্ডের প্রকৃতিতে সবুজের সমারোহ চোখ জুড়িয়ে দেয়ছবির মতো ছিমছাম নিপাট ঘরবাড়ি আর পরিচ্ছন্ন পরিকল্পিত রাস্তাঘাটে ফুটেছে নানা বর্নের কতো নাম না জানা ফুলডুনেডিন শহরে আমার সদ্য কেনা বাড়িটির যে প্রান্তে বসে আমি লিখছি , তার ঠিক সামনেই প্রাকৃতিক লেকের জলে সাতার কাটছে ৮/১০ টি বিরল প্রজাতির ব্ল্যাক সো্যানআর সেই সাথে সী-গালের ঝাঁক দ্রুতগতিতে উড়ে এসে টুপটাপ জলের উপর পড়ছে আর ডুব দিতে দিতে গোসল সেরে নিচ্ছেঅন্যান্য জলচর পাখিও আছে তাদের সাথে, যাদের নাম আমার জানা নেই

দৃষ্টি আরো কিছুদূর প্রসারিত করলে দেখা যায় সবুজ পাহাড়ের বুকে হলুদ ফুলের বিস্তী্র্ন সমারোহআর, সবুজেরও যে কতো প্রকারভেদ হতে পারে তা এখানে না এলে বিশ্বাস করা যায় নাএমনকি এখানকার ঘাসফুল গুলোও বিচিত্র বর্নিলস্থানে স্থানে পাইন, ফার, বার্চ, বনঝাউয়ের সুউচ্চ শিখর ছাড়িয়ে দৃষ্টি প্রসারিত করলেই দেখা যায়, পাহাড়ের বুকে চড়ে বেড়াচ্ছে পোষা ভেড়ার দলকোথাও কোথাও ঘোড়ার আস্তাবলের পাশে ঘাসে মুখ ডুবিয়ে আহারে ব্যস্ত দু'চারটি ঘোড়া

এতো গেল প্রানীকুল আর প্রকৃ্তির কথাসেইসাথে এখানকার মানুষজনের সততার কথা না বললেই নয়আমার দখা ঘটনা, বাড়িভাড়া নেবে বলে সম্ভাব্য ভাড়াটিয়া গেছে বাড়ি দেখতেদোতলা বাড়ির নীচতলায় লন্ড্রী্রুমযেখানে খাড়াখাড়ি মই লাগানো সিড়ি বেয়ে নামতে হয়তো বাড়িওয়ালা নিজেই বলে দিচ্ছে," এই সিড়িটা কিন্তু খুব বিপদজনকআমি একবার পড়ে গিয়েছিলাম এখান থেকে।" অর্থাৎ ভাড়াটিয়ার কাছে সত্য লুকানোর কোনো প্রয়াস তার নেই

 আর একটি ঘটনা, পরিচিত একজন ইন্টারনেটে অনলাইন বিজ্ঞাপন দেখে একটি কফি টেবিল ৩০০ ডলারে কিনবেন বলে গেছেন দোকানেদোকানী তাকে বললেন, " ৩০০ ডলারে শুধু একটি বড় টেবিলই নয়, সাথে দুইটি সাইড টেবিলও আপনি পাবেন।" অথচ আমাদের দেশে হলে এই দুইটি সাইড টেবিল আলাদা ভাবে বিক্রি করা হতো

 আমার আরও দেখা, একজনের পকেট থেকে দামী একটি মোবাইল সেট পড়ে গেছে বাসের ভিতরেভদ্রলো্ক খেয়াল করেননিবিকালে সেই নাম্বারে ভদ্রলো্ক ফোন করে খোঁজ নিলেন মো্বাইলটা ভুলে অফিসে ফেলে এসেছেন কিনাকেউ ধরলোনা ফোনপরদিন সকালে যে নাম্বার থেকে মো্বাইলের খোঁজ করা হয়েছে সেই নাম্বারে বাসের চালক ফোন করে জানালেন, মো্বাইলটি বাসের ভিতরে পাওয়া গেছে, ভদ্রলো্ক যেন নির্দিষ্ট একটি ঠিকানায় গিয়ে মোবাইলটি ফেরত নিয়ে আসেনসচরাচর এখানে একটি চাবির রিং ও যদি রাস্তাঘাটে পাওয়া যায় তবে তা নিকটস্থ পুলিশ ষ্টেশনে জমা দেয়া হয়

 ----------------এসব দেখে আমার মনে হয়েছে, এরা জাতি হিসাবে অত্যন্ত সৎ মানিসিকতারআর চুরি-ডাকাতি কিংবা অন্যান্য অপরাধের হারও আশ্চর্য্কমভাবে কম এখানে

 আরেকটি কথা, নিউজিল্যান্ডারদের আরেরক নাম "কিউয়ি"কিন্তু কিউয়ি পাখি এখানে খুব কম দেখা যায়শুনেছি পাখিটি নিশাচর এবং বিরলতবে বাজারে কিউয়ি ফলের সমারোহ চোখে পড়েএখানকার বাজারে সবুজ শাক সবজি অত্যন্ত মূল্যবানকাচা মরিচের কেজি কখনো কখনো ১০০ ডলারে পৌছেযা আমাদের দেশে হলে রীতিমতো হৈ চৈ পড়ে যেতোএককেজি কমলা ২ ডলারে পাওয়া গেলেও টমেটোর দাম তারচেয়ে ৭/৮ গুন বেশীআর, এখানকার খাবার দাবার ভেজালমুক্ত, তাই নিশ্চিন্তে খাওয়া যায় সকলকিছুই

আত্মীয়-পরিজন , স্বদেশ ছেড়ে দক্ষিনমেরুর প্রান্তে এই দেশকে মনে হয় দ্বিতীয় মাতৃভূমিএখানে বর্ন -বৈষম্য ও খুব কমস্বদেশের বিয়োগব্যথা অনেকখানিই ভুলিয়ে দেয় এখানকার সুন্দর প্রকৃতি ও মানুষজনের সততা

 কিন্তু এখানে কর্মসংস্থান খুব কঠিনযারা এখানে বিদেশী হিসেবে আছেন তাদের বেশিরভাগই ছাত্র/ছাত্রীচাকরীক্ষেত্রে নিউজিল্যান্ডারদেরকেই প্রাধান্য দেয়া হয়সুতরাং, যারা এদেশে আসতে চাইবেন তারা কর্মসংস্থানের খোঁজ খবর নিয়েই আসবেন আশাকরি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন