৩১ আগস্ট ২০১২

পরিবর্তিত বিশ্বের সাথে সংগতি রেখে চলে তারাই, যারা আধুনিক। সময়ের দাবীতে তাই পথচলা শুরু হয়েছে "আক্ষরিক শিল্প ও সাহিত্য ব্লগজিন" এর। সাহিত্য মানুষকে বাঁচতে শেখায়। সাহিত্য জানে কীভাবে মনুষ্যত্বকে উপলব্ধি করা যায়। সাহিত্য মানুষকে অমরত্ব দিতে জানে।যারা সাহিত্য করে, সাহিত্য খায়, সাহিত্য গায়, সাহিত্য পড়ে কিংবা শুধুমাত্র দূর থেকে সাহিত্যকে অনুসরণ করে সবাই আক্ষরিকের ছায়ায় জমায়েত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা জানি, ভালো কিছুর কদর করতে আমরা পিছিয়ে থাকি না কখনো। তাই, সাহিত্যপ্রেমী পাঠক এবং লেখকের উন্মুক্ত মঞ্চ হবে আক্ষরিক, আমরা এই আশায় দিন গুনছি প্রতিনিয়ত। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় অন্তর্জালের এই সুবিশাল জগতে আক্ষরিক একটি পরিবার হয়ে থাকবে, আমরা আন্তরিকভাবে এই স্বপ্নই দেখছি। পাঠক এবং লেখক ছাড়া একটি সাহিত্য ব্লগ কখনোই টিকে থাকতে পারবে না। সব ধরনের পাঠক ও লেখক তাঁদের প্রচেষ্টা দিয়ে আক্ষরিককে ছড়িয়ে দেবে, এবং আশা করছি তাঁরা নিজেরা নিজেদের কাজ দিয়ে ছাড়িয়ে যাবেন আক্ষরিককেও। আক্ষরিক এর সাথে থাকার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং শুভকামনা।


জুয়েল দেব
সম্পাদনা উপদেষ্টা

মলয় রায়চৌধুরী

তামিম আল-বারঘুতির কবিতা

[মিশরের তাহরির স্কোয়ারে যাঁর কবিতা বার-বার পঠিত হয়েছে, এবং পরে অন্যান্য আরব দেশগুলোর গণবিপ্লবে যাঁর কবিতা পড়া হয়েছে, তিনি তামিম আল-বারঘুতি। তামিম-এর জন্ম কায়রোতে, ১৯৭৭ সালে। তাঁর বাবা ছিলেন প্যালেস্টিনীয় কবি মুরিদ বারঘুতি এবং মা নামকরা ঔপন্যাসিক মিশরীয় নাগরিক রাদওয়া আশুর। এ-পর্যন্ত তামিম-এর চারটি কাব্যগ্রন্হ ও দুটি আলোচনাগ্রন্হ প্রকাশিত হয়েছে। আনওয়ার সাদাত ও হোসনি মুবারক উভয়ের সময়েই প্রতিষ্ঠানবিরোধী কবি-লেখকদের হয় জেলে পোরা হত নতুবা নির্বাসনে পাঠানো হত। তামিম-এর বাবা-মাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। তামিম নিজেও মুবারকের আমলে নির্বাসনে ছিলেন। বর্তমানে তিনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে আরব রাজনীতি বিষয়ে অধ্যাপনা করেন।
তিউনিশিয়ায় গণবিপ্লবের সূচনা হলে ছাত্রনেতারা তাঁর কবিতার খোঁজ করেন ও জনগণের মাঝে তা পাঠ করে সমবেত সাধারণকে উদ্দীপ্ত করার প্রয়াস করেছিলেন। তারপর মিশরের তাহরির স্কোয়ারে জনগণ যখন একত্রিত হচ্ছিলেন তখন প্রতিদিন তাঁর কবিতা চেঁচিয়ে-চেঁচিয়ে পড়েছেন অনেকে। নিজের অজান্তেই তামিম হয়ে ওঠেন বিপ্লবের কবি। অন্যান্য আরব দেশে তারপর থেকে তিনি নিজে জনগণের মাঝে গিয়ে স্বরচিত কবিতা পড়েছেন। সম্প্রতি তাঁর কবিতা আরব ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করা আরম্ভ হয়েছে। এখানে তাঁর সে-রকম একটি কবিতার বাংলা অনুবাদ করার চেষ্টা করেছি। –ম. রা. চৌ ]

উপহার

আমার জীবনটাই একটি উপহার
যা আমাকেই দেয়া হয়েছে
আমার শূন্যতম জন্মদিনে,
আজকে আমি একটা উপহারের রিবন খুললুম,
তার মোড়ক খুললুম
আর তাতে অনেক জিনিস খুঁজে পেলুম,
সাধারণ,
কিন্তু বিস্ময়করও; সোনার ঘড়ি
আর সোনায় গড়া
জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত,
বাক্সের ভেতর একজন জোকার
তোমাকে হাসাবার জন্য
কিংবা ভয় দেখিয়ে মেরে ফেলার জন্য, তা নির্ভর করে অনেক কিছুর ওপর;
দুটি সুন্দর ডলপুতুল,
একটা খেলবার জন্য
অন্যটা নয়,

কয়েদির মুকুট আর একজন রাজার শিকল;
আমি আরও পেলুম রুইতনের এক জোকার
তুমি তাকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখতে পারো
সে একই রকম দেখায়;
আমি পেলুম বই,
আমি পেলুম লেবেল-আঁটা একটা দীর্ঘ টেপ
“পঞ্চাশ বছর ব্যাপী আরব-ইহুদি সংঘর্ষ” ;
একটা দোয়াতের ভেতর পেলুম নরক
আরেকটায় স্বর্গ;
পেলুম রেস খেলার মাঠের আরব ঘোড়া
গায়ে তার আঠা মাখানো
একটা পাথর পেলুম যা থেকে আগুন বেরোয় না;
বাক্সটার একেবারে তলায়
আমি পেলুম একটা সাদা কার্ড যাতে আমার নাম লেখা
আর কিছুই লেখা হয়নি তাতে।

আমি বুঝতে পারলুম না এই জিনিসগুলো নিয়ে কী করব;
হা ঈশ্বর, ধন্যবাদ,
কিন্তু কেনই বা কষ্ট করা ?
আমি সব কটি জিনিসই আবার রেখে দিলুম বাক্সের ভেতর,
বন্ধ করে দিলুম বাক্স,
মোড়কে মুড়ে দিলুম
তারপর আকাশের দিকে তাক করে ছুঁড়ে দিলুম,
উপহারের বাক্স রূপান্তরিত হল এক ঝাঁক উড়ন্ত পায়রায়
যাদের আমি চিরকাল অনুসরণ করব।
কেনই বা আমি অমন করলুম ?
আমি সত্যিই তা জানি না ।

অনুবাদ: মলয় রায়চৌধুরী

মেসবাহ মিঠু

কার শরীর জেগেছিল মন জাগেনি, কার মন জেগেছিল মস্তিষ্ক জাগেনি

ভাল মন্দের কিংবা পাপ পূণ্যের অর্থ যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ
এখান থেকেই শুরু নতুন এক দোলাচল
"কার শরীর সিক্ত হয় চরমভাবে
অভিজ্ঞতার দুয়ারে"।

কার শরীর স্বাদ পায় আনকোরা ভাবে
মিশ্রিত ভয় ও উত্তেজনায়
কে একটি দিন শূরূ করে
ভালবাসার বেলাল্লাপনায় রাত কাটিয়ে।

কার রাত্রি কেটেছিল কামুকতায়, হাতের ভালোবাসায়
কে গিয়েছিল নিষিদ্ধ পল্লীতে মেটাতে
নব জন্মিত আদিম্যতার ক্ষুদা ।

কে বা কারা ঢুঁ মারে
প্রতিটি নিষিদ্ধ ওয়েবসাইটে
হলুদ বলি বা লাল বলি বা নীল ছবিতে।

সরদার ফারুক

ব্রতকথা

শিশুদের বই থেকে বেরিয়ে এসেছে কিছু টিনের সেপাই
আবার মন্ত্রণা দেয় - ‘ চলো ’
বর্ণান্ধের মতো আমি কালো-সাদা লাল-নীল গুলিয়ে ফেলেছি ।

ফিরোজার বুকে সুপুরি ওঠার আগে কতো লিখেছি দেয়ালে
পুলিশের দিকে ঢিল ছুঁড়ে দেয়াল টপকে পালিয়ে এসেছি
কতোবার ঘামে ভেজা শার্ট গায়ে শুকিয়েছে
ঘাটের কুলিকে ডেকে শুনিয়েছি লাল ইস্তেহার ।

সারাদিন রোদে ঘুরে কালিজিরা নদী ,আশ্চর্য পাখির ডাক
পাগল কবিতা ছেঁড়া পকেটে রেখেছি ।

বার বার ভেসে গেছে প্রতিজ্ঞার ভেলা
সামাজিক নাগিনীরা ছল করে কখনো এসেছে
রথের মেলায় শেখা অসভ্যতা ভুলিনি তখনো ।

দাড়িওয়ালা কিছু লোক শেকল ভাঙার কথা বলে
টেনে নিয়ে গেছে এক বিরান রাস্তায় ;
ঢাকের শব্দের সাথে আসেনি উৎসব
শীতলাখোলার মোড়ে নির্জন মন্দিরে
জোগাড় করেছি কিছু দেশি বোমা , আদিম বন্দুক ।

কিছুই ঘটেনি - শুধু বুড়িয়ে গিয়েছে
বেমানান রাগী যুবকেরা , প্রবল বিদ্রুপে কেউ
কবি বলে ডাকে ।

ব্রতকথা থেকে বেরিয়ে এসেছে কথক ঠাকুর
কী এমন কথা আছে আমাকে শোনাবে !

সিপাহী রেজা

হলুদ সঙ্কেত

আমি নাগরিক পথ-ঘাঁট, বাসস্থান, ইট কাঠ পাথর পিচে নয়
সাদা কালো, রঙিন কবিতা দিয়ে মুড়িয়ে দিতে চাই।
যেখানে ঘরময় যৌথ পরিবার, যৌথ সুখ, যৌথ সমাচার
যেখানে পচা মাংসের গন্ধে বুঝতে হয় না
“পাশের ফ্ল্যাটে স্বামী কতৃক স্ত্রী খুন।”
 
আমি সেই সময়কে ফিরিয়ে আনতে চাই, যেখানে-
প্রতিবেশী বলে একটা সম্প্রদয় ছিল,
মহল্লা, পাড়া নামক কিছু গোষ্ঠী ছিল।
 
আমি ভুল করেও আর দেখতে চাই না একটা পোস্টার, যার শিরোনাম
-অমুক হত্যার বিচার চাই!  -অমুক শক্তি নিপাত যাক!
 
আমি সেই সব ‘দিন-আনে দিন-খায় নাগরিকদের দিকে,
তাদের কালিমাখা ভাতের হাড়ি থেকে গরম সোঁদা গন্ধ নিয়ে যাব-
নিয়ে যাব হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মত অভিজাত নগরীর জরায়ু-কূপে।
 
খুব দুপুরে ছোট হয়ে আসা ফেরিওয়ালার ছায়ার মত, হাই তোলা-
নেড়ি কুকুরের মত, স্কুল মাঠে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকা কিশোরী!
চেন পড়ে যাওয়া- বিরক্ত রিক্সাওয়ালার মত,
বিষম রোদে, চিটচিটে ঘাম-দুর্গন্ধময় বাস্তবতাকে শোনাবো-
একটা প্রণয়ের কবিতা। মানবিক শহরের সব ডাস্টবিন গুলো-
পরিপূর্ণ করে দিব ক্লান্তিহীন রঙের কিছু রঙ্গিন ফুল দিয়ে।
 
যে শহরে, স্ট্রীট ল্যাম্পের আলোই ভাগ্যাহত জনগোষ্ঠীর আব্রু !
যে শহরে, অহেতুক লাল-হলুদ-সবুজ বাতির আকস্মিক সংকেতে-
হঠাৎ কেঁপে উঠে, একটি ঘুমন্ত শিশু! সে শহরকে-
আমি খুব আয়োজন করে দিতে চাই- একটা “স্বাধীনতা পদক”
দলিল করে দিয়ে যাব হার ভাঙা খাটুনি, ফুল বেচা শিশুর শৈশব !

আব্দুল্লাহ আল জামিল

উপেক্ষিত ভাবনাগুলো

কী এতো ভাবছো বসে উপেক্ষিত কবি?

প্রত্যাখ্যাত ভালোবাসারা ইটের ভাঁজে
শুষ্ক ধুলোগুলো উড়ে চৈত্রের বাতাসে
অভিমানী মেঘগুলো ভেসে ভেসে যায়
বৃষ্টিহীন ফসলের ক্ষেতে মরে কৃষক হৃদয়।

দূরে ইটের ভাটায় জ্বলছে আগুন
কালো ধোঁয়া মেশে ধুলো আর কুয়াশায়
ইট-কাঠ-রড-বালু-সিমেন্টে জীবন
রিক্সার বেল, গাড়ির হর্ন, ইঞ্জিন, যান্ত্রিক ছন্দ।

নিসর্গ বিপন্ন আজ মানুষের হাতে
ভালোবাসারা ভীষণ প্রত্যাখ্যাত আজ
কবির ভাবনাগুলোও উপেক্ষিত হয়।

কী এতো ভাবছো বসে উপেক্ষিত কবি?

পুণ্যশ্লোক দাশগুপ্ত

সহজ মা সিরিজ-১

সন্ধ্যেবেলা আমার আত্মা স্পর্শ করলো নতুন ফ্লেভার
সেই জিন্দেগী মিশিয়ে নিলাম এক পেগ ভোদকার সঙ্গে
দুষ্টুমির একটা রঙ আছে গানে তা মিশিয়ে নিলেন সহজ মা,
ফকিরের তৃতীয় নয়ন গাইছে আর বিলিয়ে দিচ্ছে
আড়ালের ওড়িয়েন্টাল সুর
আকাশচুম্বী এয়ার-ইন্ডিয়ার আশায় একটি ছোট্ট ঘুম
সিঙ্গাপুর হুস হুস, ফ্লাইট লুকিয়ে পড়লো মেঘে

মন পবনের নাও আমার মন পবনের নাও
গানের বিষয় আলাপনের বিষয় আমার মন পবনের নাও
তরল মেজাজে মশগুল আমাদের ললিত-কলা
বাউলের চোদ্দ-আনা,রবিঠাকুরের গান
সহজ মা ঢেউ তুলছেন আর তা থেকে শিহরণ জাগছে
কাচের প্লেটের ওপর ডিমশুদ্ধ ইলিশের পেটি
বাঙালী জীবনে কবি নিজেকে লুকিয়ে রাখুক
গৌরব লেপটে থাকুক ইনটারনেট সার্চ টাওয়ারে
আমরা গান শুনবো টাটকা ভেঞ্চার ডিমশুদ্ধ ইলিশের পেটি
আমাদের সেলিব্রিটি নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াবেন
তাঁর রাখা ক্রকারি সেটের সাদা কথা বলবে নোলক পরা নাকের সঙ্গে
প্ল্যাটিনামে আকাশ উন্মুখ চলো তবে যাই ভোকাট্টা ঈদের ছুটিতে পদ্মা
প্যারিসের থিয়েটারে

আলী রেজা

সাদা চাদরে চন্দন ঢাকা মুখ

পাল তোলা মাস্তুলের কাঁধ থেকে পচনের শুরু
সাদা চাদরে চন্দন ঢাকা মুখ
বুকজুড়ে সাদা কালো রূপছড়ি
গাব দেয়া পাটাতনে নিতম্বের জ্যামিতিক রেখা ঘিরে
পচনের লাভা নামে পিতলের মৃগনাভি তলপেটে;

ভরাকটালের মাঝ নদীতে নৌকা ভাসাই
ইলিশের রোশনাই ভেঙ্গে ভেঙ্গে ভাসি
লখাইও ভাসে কদলীবৃক্ষে ওষ্ঠে বাঁকা হাসি
কুমিরের সাথে পিরানহা’র যুগলবন্ধী
কুচি কুচি করে বেহুলার লাল পিরানের ঘের
শুশুকের গন্ধমাখা জলে কুট কুট করে কাটি
পণ্যখেকো স্বপ্নগুলি আর
বিজ্ঞাপনের ঘন কালো গুচ্ছ গুচ্ছ চুল…

নৈরিৎ ইমু

পাগলা ঘোড়ার মতই কবিতা ছুটবে একদিন

পাগলা ঘোড়ার মত কবিতা ছুটবে একদিন
যেদিন সিলিং-এর সাথে ঝুলবে আরো একটা যুবতীর লাশ
সমস্ত কান্না ফুরিয়ে গেলে মানুষ যেদিন
শোকে দুঃখেও অট্টহাসিতে গলা ফাঁটাবে
সেই দিনটি কবিতার জন্য রেখে দিলাম
যেদিন বিধবা হয়ে ঘরে ফিরবে আদরের বোনটি...

এ সমাজের লাগামহীন অপবাদে মুখপুড়ি রাক্ষুসী বদনাম নিয়ে
পাগলা ঘোড়ার মতই কবিতা ছুটবে সেই দিন ..

যেদিন নীল আকাশ গুম হয়ে যাবে
পিতৃত্বের পরিচয় দশ পুরুষে ভাগ হয়ে
সন্তানের সিদ্ধ মাংস গিলে খাবে ক্ষুধার্থ মা
সেইদিন কবিতার ভারে দিশেহারা হবে কবি ..

বাহুতে উল্কি এঁকে শার্টের বোতাম খুলে প্রদর্শিত শরীরের ভাঁজ
যুবকের মিথ্যে অহমিকায় যেদিন ঘুন ধরবে
যেদিন মানুষের গর্ভে জন্ম নিবে পিশাচের ছানা
কবিতারা সেই দিনটির জন্য অপেক্ষা করো ..

যেদিন পৃথিবীর তান্ডবলীলা দেখে লজ্জায় পুর্বের সূর্য
লুকিয়ে যাবে আবারো উদয়নের খাঁজে
চন্দ্রের ঠিক মাঝখানে একটা ফাটল
আর নক্ষত্রের আলোগুলো অনুজ্জল থেকে অনুজ্জল হয়ে ঘোলটে
যেদিন নরকীয় পৃথিবী থেকে দূরত্ব বাড়াবে সবকটা গ্রহ
ধূলো ঝড়ে নাগালহীন মায়াবী প্রেম , প্রশান্তির আঁচল
কুস্রী ,কুৎসিত মুখায়ব নিয়ে এক একজন তাড়া করবে অন্যজনে
যেদিন রক্তে মানুষ স্নান করে নিবে নিশ্চিন্ত মনে
দিকবিদিক ছুটন্ত বিবস্ত্র প্রেতাত্মার কারবালা
একএকটি কবিতা সেদিন একএকটি দেবদূত হবে
পাগলা ঘোড়ার মত কবিতা ছুটবে অবিরাম ..

সৌভিক দা'

রিসাইকেল বিন

সালমান খান না থাকলে ক্যাটরিনা কি জন্মাতো এই দুনিয়ায় ? অন্য কোথাও, অন্য কোন গ্রহে, হয়ত ধুলো হয়ে মিশে থাকতো মার্স কিংবা ইউরেনাসের গুহার ভেতরে। আচ্ছা, ভেনাসে কি ধুলো আছে ? অন্ধকার ? সর্পিল লেক আছে ? সোনালী সাপেরা কি সেখানে একেবেঁকে চলে যায় এপাড় থেকে ওপাড় ? তাই দেখে ভেনাসের সৌন্দর্য্য-দেবীগণ কি সমস্বরে চেঁচিয়ে ওঠেন ? যাচ্চলে, কারে কী জিগাই ! এখানে কেউ ভেনাসে গেছে নাকি কোনদিন ? কিংবা তাদের কোন দূর সম্পর্কের মামাতো ভাইয়ের শালা ! যে বনানী থাকে, মাঝে মাঝে ঘুরতে আসে ফুপির বাসায় ! একটা সিলভার কালারের আইফোন নিয়ে, কানে হেডফোন, গলায় কুত্তার মালা ! ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়ায় বিবিএ থার্ড সেমিষ্টার !!!

কিংবা ঐ মামী, যে কিনা ইউএসএ থাকে। কয়দিন পর পর লাল টমেটোর মত মুরগীর বাচ্চার ছবি তুইলা ফেসবুকে আপলোড করে : দ্যাখ ! আমরা কত্তো সুখে আছি ! ইচ্ছা করে, মুরগীর বাচ্চাগুলারে সবজির স্যুপ বানায়া খায়া ফালাই। কিন্তু এইসব তো আর বলা যায়না। হাজার হউক, আমেরিকান ভিসা ! লাগলেই বেহেস্তের চাবি, নামাজ আর পড়া লাগেনা ! সে হিসাবে উনারাতো বেহেস্তেই থাকেন। আর আমরা বোধহয় দোজখে। আচ্ছা, দোজখে কি ফেসবুক চলে? ইন্টারনেট? আছে নিশ্চই একটা ব্যবস্থা। নাইলে বেহেশতবাসীরা তাদের সুখ-সাচ্ছন্দ্য দেখাবে কেমনে? এইটাতো একটা সত্যি কথাই যে, নিজের সুখ দেখাইতে না পারলে আসলে সুখের কোন ভ্যালু নাই। দুনিয়ার সবাই যদি পোর্শে আর মার্সিডিজ চালায়, টয়োটার মত, তাইলে কেমনে কী ! বিচার-সালিশ কেমনে হবে ? করিমনরে পাথর ছুইড়া মারার ফতোয়াটা দিবে কে? সোলেমানের সাথে বিবাহ-পুর্ব যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্যই যে এসেছিল। আচ্ছা, সোলেমান মিঞা না থাকলে করিমন কি জন্মাতো এই দুনিয়ায় ? হয়ত অন্য কোন গ্রহে, অন্য কোথাও, ধুলো হয়ে কিংবা অন্ধকার...


তৃষ্ণা

মাথার ভেতরে সিগারেট পোড়ার শব্দ
আর একটি মানবিক ভোর চেয়ে চেয়ে শরীরে
দীর্ঘকাল সঙ্গমহীন রাতের তৃষ্ণা

শব্দের খেলা আমি জানিনা নারী -
জীবনযাপনে নেই কোন বিশেষ কৌশল -
রাত জেগে জেগে নিদ্রাহীনতার রোগ ছুয়েছে ঘর বাড়ী
আর প্রাচীন ভাষার মত ভুলে গেছি গত জন্মের স্মৃতি

মাথার ভেতরে সিগারেট পোড়ার শব্দ
আর একটি মানবিক ভোর চেয়ে চেয়ে শরীরে
দীর্ঘকাল সঙ্গমহীন রাতের তৃষ্ণা

মৃন্ময় মীযান

ফিলিংস

উপদ্রবহীন সময়ের বাতাসে হিমের ঘ্রাণ ।
অদৃশ্য কৌটায় ভরা সুখের পারফিউম
ঢেলে দেই শরীরের দেয়ালে।
সুখের চিত্রনাট্য লিখতে বসলে
এই মুহূর্তে,
বাতাসে ভেসে যাবে অজস্র চুম্বন !

এখন পূর্ণিমা-অমাবস্যা নিয়ে নো চিন্তা-
‘’স্লিপিং পিল’ দীর্ঘজীবী হোক !

তমিজ তমোহর

যাযাবর ০১

১. ঘুম থেকে উঠে দেখি জীবন অন্যরকম।

২. আমি যখন বন্ধুদের সাথে থাকি
তখন খুব একা লাগে।

৩. শূন্যতার উপর নীল রঙ।

৪. আগুন খোঁজে বিস্মৃতি।

৫. আমাকে আবারো হাঁটতে শেখাচ্ছে ব্যস্ত শহরের রাস্তা ।

৬. অপেক্ষায় যে থাকেনি দশ বৎসর
সে কি করে বুঝবে সময়?

৭. অশ্রুভেজা চিঠির জবাবহীনতার শিকার হয়নি যে
সে কিভাবে বুঝবে ভালোবাসা কি।

৮. এক রাতে মৃত্যু দেখা দিলো
ঘুমেও মৃত্যু দেখলাম
ঘুম থেকে উঠে দেখি- আমি আগের ছেয়ে ভালো আছি।

৯. কণ্ঠনালির উপর বেঁকে যাওয়া ছুরি
আমি আপন ভাবতে থাকি যা বলার আগে আমাকে থামান হল।

১০. দেখছি, আলো ডুবে যায়।

রাজীব চৌধুরী

শরমের প্রজাতি

আশা বুক থেকে হারিয়ে গেছে সেই দিষ্যুদ বারের জোছনা হবার কালে
এখন শুধুই অমাবস্যা থাকে মাসের শেষে ও শুরুতে
আরেকটা মাস চলে এলে- না খেয়ে থাকা ক্ষুধার্ত কুকুরের মত জিভ বের করে

বসে থাকি বেতন দাতার পায়ের দিকে মুখ তুলে।
আমার টাকা-ঘাম ঝড়ানো- শ্রম দিয়ে কামাই করা টাকা নিয়ে
ওর ছিনিমিনি খেলে- অবারিত প্রান্তর জুড়ে
আমার হাড় ভাঙ্গা খাটুনি দিয়ে ওরা বড় লোক হয়-
টাকার পাহাড় গড়ে ওঠে- আর আমি মাস শেষে ক্ষুধার্ত থাকি
ঘাম শুকিয়ে যাবার আগে যে শার্ট পড়ে আবার সকাল বেলা বের হই
সেই শার্টে পচন ধরে
এবং মাস শেষে বেতন দাতার দিকে ছেড়া শার্ট নিয়ে তাকিয়ে থাকি
কুকুরের মত জিহ্বাটা বের হয়ে যায়
কে বলবে আমি ও এক কালে মানুষ ছিলাম।
এখন শোষক শ্রেণী মানুষ- আর আমরা শোষিত শ্রেনী হলাম শরমেয় প্রজাতি।।

কুয়াশা

সম্ভোগ কিচ্ছা

কিছুদূর যেতে যেতে ফিরে আসে
পার্বণের শীতল শিহরণ।
কার্ত্তিকের যৌন আবেগ কুকুর মনচিত্তে,

ফুরিয়ে যায় হৈমন্তী চেতনা।

ভালবাসা, তুই নষ্ট মোহ যাতনা!
দেবীরে করে পায়ে পিষ্ট
পতিতারে কর বাসনা।

সম্ভোগের মায়াকান্নায় ভাসায়েছি ক্ষুধাছন্দের বৈতরণী।

এসো হাত ধর, ভয় পাচ্ছ?
তুমি পতিতা তাতে কি!
যজন যাজন গদ্যঘাম নিংড়ে খেয়েছ
আর কাব্যপতির হাতে ভয় পাচ্ছ !
এখানে তুমি জেগে ওঠ একবিংশ শতকের কবিতা,
শব্দের হুংকারে বাঙ্কারে বাঙ্কারে জ্বালাও
ক্ষুধামন্দার বিস্ফোরণ।
জ্বালিয়ে দাও পতিতাপতির কাছাড়ি ঘর।

আমি তোমাকে ভালবাসি অন্ধকাব্য,
ভালবাসি তোমার সদা স্নিগ্ধ হাসি আর খুনসুটে ন্যাকামী।
ম্ভোগ সম্মেলনে রুদ্র মূর্তি দেখে তোমাকে চিনে নেই
পতিতারূপী প্রিয়তমা দেবী আমার

চৌধুরী ফাহাদ

সব দিন নষ্টদের অধিকারে

মানব মর্ম ক্ষয়ে যাওয়া চর্ম
সাম্যের মাঝে জ্যান্ত গণ্ডগোল,
হাতে রাখা হাত বিরাট তফাৎ
ছাড়লেই ধূতে হয় যত ধূল।
একদেহে একস্রোত একটাই আদল
সবপ্রাণ একরঙ, লাল বা মেরুন,
ঠোঁটের বাণী শুধু মুখের শোভা
স্বার্থের দ্রোহে জেগে উঠে খুন।
তুমি- আমি ভাই ভাই
মানুষের জন্য মানব জন্মই মূল,
দেহে যার রাঙা কদাকার
চোখ ফেরালেই সে চক্ষুশূল।
ভরা পেট ভরে ভূরিভোজে
সংযমে বাজে সংহার ঢোল,
চর্মসার বুক কাঁদে হাড়দাঁতে
জীর্ণ হাতের নেই কোন কূল।
সততার বাণী মৌখিক চর্বণ
অন্তরাত্মায় ভরা বিষাক্ত বোধ,
আছে যার, তার রক্ষিত অধিকার
শূন্য থালায় শুধু জাগ্রত ক্রোধ।
ধর্ম কাঁদে ধার্মিক দণ্ডে
গোঁড়াদের মাঝে বিলুপ মহান,
স্বার্থের কলে শিরচ্ছেদ হয়ে
আঁধারে আড়াল শান্তির মান।
জ্ঞানপাপীদের মিছিলে জ্ঞানী যত
গুণীর গলায় সজ্জিত ফাঁস,
বাণিজ্যের বেদমন্ত্রে জংধরা
জ্ঞানীর বর্ম, কলমের ত্রাস।
কিছু প্রাণ কাঁদে অনির্বাণ
জন্মই তাদের জন্মের দোষ,
জন্মাবধি পায় বিসর্জন বান
তবু জাগতে নেই তাদের রোষ।
শুরু থেকে আজ, সবদিন
ছিল শুধু নষ্টদের অধিকার,
তেমনি আজও তারা অক্ষয়
অধিকারে আছে নষ্টরা দুর্বার।


(বেশ কিছুদিন ধরে হুমায়ূন আজাদ এর একটা লাইন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে বারবার...
"আমি জানি একদিন সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে"
আমার বলতে ইচ্ছে করে...
"সব দিন নষ্টদের অধিকারে ছিল, সব দিন নষ্টদের অধিকারে আছে" )

কে কে গুপ্ত

নখ

ও দিকে এলোমেলো বাতাস
উড়িও না প্রেম, ভেসে যাবে অনুভব
এ পাপ তোমার
পাপীয় পরিণয়, তাকিয়েছিলে ভুল চোখে
তবুও তো দৃষ্টি!
নগর পোড়ানো অলৌকিক বৃষ্টি
মাতাল জলজ রাত্রি
স্যাঁতস্যাঁতে ঘ্রাণে কি যে ভয়ানক সৃষ্টি!
রাত ভাঙ্গে, দিবস কাঁদে
আলোর গায়ে নীল নীল জোনাক জ্বলে
তোমার নখ কেবল ভুল পুরুষের বুকে আঁচড় কাটে।

প্রিয় দ্বীপ

প্রলাপ, যৌন কর্মীর

যৌবনে পদার্পিত হবে তুমি
অতি সযত্নে -

চোখের দেখা এই সমভূমি ,
কতটা উচু নিচু
কতটা শীতলতা কতটা দাবাদহ
পথ বেয়ে বেয়ে আমি সে জানি ।

নিজেকে এড়াতে পারিনি
কেন পারিনি, সে প্রশ্ন থাক
বরং ঝালিয়ে নিও অন্ধ সংবিধান ,
ঠগ বাজরা সহসায় বলে দিতে পারে
আছে শিক্ষা আছে বস্ত্র আছে সাম্য
আর আছে অন্ন সংস্থান ।

এমনই এক সংস্থানে আজ আমি গৌণ
মৌন আমার সুশীল বোদ্ধা ‘রা
নত সম্ভ্রম - সমাজের কাছে ,
বিদায়ে নব্য কূল
ভরা যৌবনে গড়া বাসর
বিলীন পন প্রথা’র দ্রোহে ।

নিভে গেলো বসন্তের হলদে রোঁদে
দাঁড়ানো পলাশের মাদকতা
ছুঁয়ে যাওয়া উষ্ণতা ,
আর ,আসেনি কখনো শরত
শিউলির সৌরভে
হিমেল মাখা পূর্ণতা ।

রক্তে মাংসে উজ্জীবিত তারুণ্য’ ও আজ পরাজিত
দূষিত খেটে খাওয়া প্রায়, পথ ঘাট
সঙ্গতে শ্রেণী বিন্যাসের নিত্য অস্থিরতা ,
ধমনী বেয়ে বেজে ওঠেনা প্রতিবাদী ধ্বনি
শিরা থেকে উপশিরায়
যেন সব স্পন্দনহীন রক্তের উষ্ণতা ।

অনুভব হয় আজও , নিসঙ্গতায় -
ছেড়ে আসা কৈশোরর অলীক স্বপ্নে
দুত্যিময় আহবান ,
ভাবনায় মোচর টানে , পেটে জাগে নিপীড়িত ক্ষুধা
নিশুতি সন্ধ্যায় আয়োজিত শ্মশানে
বাঁচতে জ্বালাই মন প্রাণ ।

এখানে পাঙ্গা কষি দৈহিকতায়
নিত্য আগুন্তকের মাঝে
মানুষে মানুষ নেই – সমাজে সমাজ নেই
নব নিত্য ক্লান্ত আর হতাশার বশে ।
তোমাকে তাই .....

অনুপম দাশশর্মা

অবশেষে নৌকা ভাসে

অনেকদিন পর ঝরঝরিয়ে হাসলে
খোলা পিঠে তুষারপাত
ভরা যৌবন দাপানো শরীর কাঁপিয়ে
চারিদিকে নেচে ভাসলে,
আশেপাশে গাছে গাছে এখন সোঁদা ক্যানভাস
কতগুলি চড়াই ক্লোরোফিলের সুবাস মেখে
ডুবন্ত সুর্যের ফিকে দাপট গুনছে।
বহুদিন এমন আদুরে ভালবাসনি
বিষণ্ণ মুখে মেঘ নর্তকী মুখ ফিরিয়েছে দখিনের
বারান্দার বেকার কবির বাঁধানো খাতায়,
আজ, সারাদিন সেতারের গ্রন্থি ঝংকারে
মিলিয়েছ তাল ঝমাঝম বর্ষা প্রপাতে।

এসো, এবার শব্দকুঞ্জে মিশে যাও মৃগনাভির ঔরসে।

সুরাইয়া হেলেন

শীত বুড়ি

শীত বুড়িটা এসেছে ঐ
লেপ-কাঁথা গায়ে
হাতে লাঠি ঠক-ঠকা-ঠক
কাঁপছে হিম পায়ে!

দরজা খোল,ডাকছে বুড়ি
বাড়ি বাড়ি গিয়ে
ভেতরে ঢুকে শীতল বাতাস
দিচ্ছে ছড়িয়ে!

বুড়ির সাথে শীতে কাঁপে
বের করে লেপ কাঁথা
মানুষগুলো শীতের ভয়ে
ঢাকে শরীর মাথা!

হিম ছড়িয়ে সব বাড়িতে
পুরো বাংলাদেশটা
আসন পেতে জাঁকিয়ে বসে
পৌষ-মাঘ শীতকালটা!

দুটি মাস শুয়ে বসে
পিঠা-পুলি খেয়ে বুড়ি
লেপ-কাঁথা নিয়ে যাবে চলে
এলে বসন্ত ফুলপরী !

মোরশেদা খানম

জীবনের লেনদেন

একটা মৃত্যু ভয় আমায় স্পর্শ করে প্রতিনিয়ত ,
গ্রাস করে আমার চিন্তা চেতনা এবং আমার অস্তিত্বকে ,
তাড়া করে ক্লান্ত দুপুরের অশান্ত প্রহরে !
ছোটাছুটি করে আমার স্বপ্নের আঙিনায় ,
যেনবা আমায় বাঁচতে দিবেনা কিছুতেই !

আমার আত্মাটা ছড়িয়ে দিবে
ঐ দূর নীল দিগন্তে কিংবা
গৌধূলীর স্বপ্নময় লালিমায় !!

প্রাণহীন পড়ে থাকা নিথর দেহটা
পরমুহুর্তেই মাটিচাপা দিবে নিঠুর হাতে ,
হয়তোবা কিছুটা চিত্‍কার কান্নাকাটি
হৈ হুল্লোড় কিংবা ....
প্রিয়জনের স্মৃতির সাগরে অবগাহন !
তারপর ?...?

সব ভুলে গিয়ে সময়ের ডানায়
অস্থির মানুষের ছুটাছুটি !

অতৃপ্ত আত্মাটা ফিরতে চায়
কয়েক মূহুর্তের জন্য
সেই না ফেরার দেশ থেকে এই অকৃতজ্ঞ ধরনীতে ,
বুঝে নিতে জীবনের সকল লেনদেন ।।

এম.এইচ. তুষার

লালন হয়ে অপারে যাব

আজব কারখানার শ্রমিক হইয়া
দু'হাতে গড়ি কুজাতের জাত,
চাকরি তবে ছাইড়া দিলে
দিনের আলোয় ফুটবে রাত।
আমার খাঁচার চেনা পাখি
উড়ে গিয়ে অচীন রয়,
ওরে লালন, আমার ক্যান

সময় গেলেই সাধন হয় ?
লালন আমারে বোঝার আগেই
গিয়েছে চলে অপার ছাদে,
আমিও লালন বোঝার আগেই
পেয়েছি যাতন নষ্ট ফাঁদে।
সব কিছু আজি শূণ্য লাগে,
হারাবার বড় ইচ্ছে জাগে !
কোথায় যে হারাই?
সে পথ পাচ্ছি না খুঁজেই।
আমি ও তাই লালন হব,
লালন কে না বুঝেই।
লালনে লালনে কাটাকাটি,
একাকী চলন, একাই হাঁটি।
ওরে লালন, যদি পারিস ফিরে আয়-
আজি আত্মা বড়ই অসহায় !
এপারে তুই বসত গড়ে
খাঁচার পাখিরে ফিরায়া আন,
অপারে যাওয়ার প্রস্তুতিতে
মম হৃদয় এখন মহাশ্মশান!

সরোয়ার জাহান

যন্ত্রণার স্তব্ধ প্রতীক্ষায়

দু’চোখে গভীর অতল সমুদ্র
নীল নেশায় ডুবে ডুবে
বাঁচার আশ্চর্য তৃষ্ণা

আমি জ্বলি পুড়ি তবুও
বোঝে না রক্তের ভাষা !

দুঃখ জ্বেলে দেয় সংশয়
লন্ঠন নিভে যায়
দুঃখরা পরাভূত হয়না কোন কালে
থাকে শুধু নীলের নেশা নিঃশব্দ জীবনে !

দাম্ভিক যৌবন তুমি আছো তবু
হৃদয়ের নিভৃত আলোতে আলো-ছায়ার খেলা ঘরে
অলক্ষ অভিসার তুচ্ছ বঞ্চনায় পার হয়ে
যে পথে পড়েনি মানুষের পদচিহ্ন
প্রাগৈতিহাসিক নীলিমায় দুরে বহু দূরে
আমি শুধু হেঁটে যাই নীলকান্ত অন্ধকারে!

আপন স্বরূপ ভুলে
যন্ত্রণার স্তব্ধ প্রতীক্ষায় !

আহম্মেদ রফিক

হিস্যা

অবস্থান কোন ভূগোলে?
নাম দেখে সন্দেহে পড়ে যাই দ্বিমাত্রিক নাকি ত্রিমাত্রিক ?

যদিও নাম কোন বিষয় নয়,
অনুভূতি, সম্পর্ক এবং ধার টাই বিবেচ্য, আর মাপকাঠি আচরণ
মাত্রিকতা দেখে অজ্ঞতায় ডুবি, পুড়তে থাকি; তিক্ত হই আরও বেশী।

অনেক আনকোরা অভিমত বেড়া ভাঙে বিস্ময়কর!
জীবন নিয়ে তামাশা দেখতে চায়, ক্রস ব্রিডিং চায়; স্পষ্টতঃ
চিলেকোঠায় মডেল কন্যার লাশ - ভালোবাসে আইনের ছাত্র কে,
তন্বী ভালোবাসে অমল সাহা কে; আর ছাত্র সংগঠনের ছেলেটা
লিভ-টুগেদার করত ইডেনের মেয়েটার সাথে;
এসব কোন ঘটনা, দুর্ঘটনা কিছুই নয় কারো চোখে,
রেজোয়ানের নামটাও একদিন ভুলে যাবে কোলকাতা বাসী ।

কারো বুকে ছুরি মারার চেয়ে অমানবিক, অধর্ম নাই, অথচ-
সন্তানগুলো যখন তখন চালিয়ে দেয়;
সমাজ, সংস্কার ডিঙানো মানুষ আলাদা, তাদের বসবাস
সেও এক চিড়িয়াখানায়, নির্দিষ্ট পরিমণ্ডলের গারদে ।
বিস্তৃত মানব সমাজে অপাংক্তেয়, চিহ্নিত -বাঁকা চোখে দেখে,
সব মানুষই ভিন্ন গ্রহের জানে ।

গায়ে জোর থাকলেই বেয়ারা হয় ষাঁড়, থোড়াই কেয়ার .....
সার্টিফিকেট, পোস্ট, পজিশনের মানুষের অনৈতিক কাজ
এখন বিস্ময় জাগায় না মোটেই!
সেই যে ছাত্র ছিল স্কুলে অনুপস্থিত, বঞ্চিত ছাত্রত্ব বোধ হতে-
তার - শিক্ষা আর উপলব্ধির প্রশ্ন অমীমাংসিত না থাকে ।

প্রবাদটা মনে পড়ে- যেমন কর্ম তেমন ফল;
হিস্যা টা মিলে যায় অবশেষে ।

সমর কুমার সরকার

মাটি গেলো কোথায় ?

তেঁতুলিয়া-র 'ভুবন জানা',দিলেন মেয়ের বিয়ে,
রাঢ় বাংলার দুর্গম এক নদী-বিহীন গাঁ-য়ে।
জামাই যে তার 'মদন কোলে',গ্রাম্য চাষীর ছেলে,
'লেখাপড়া' শেখেনি সে,যায় নি কো ইস্কুলে।
জমি আছে কয়েক বিঘা,করে ধানের চাষ,
বাড়ীর পাশে মুদির দোকান চালায় বার মাস।
চাষের জমি,মুদিখানা,আয় যে বড় জবর,
গ্রামঞ্চলে এমন ছেলের মূর্খ হ'লেও কদর।
'ভুবন জানা'-র মেয়ে 'চাঁপা',সে ও নিরক্ষর,
যোটক বিচার অনুসারে সমান 'পালটি ঘর'।
অজ্ঞানী রা দেখাতে চায়,তারা-ই বড় জ্ঞানী,
মূর্খ মদন চাল চলনে অনেক টা তেমন-ই।

বিয়ের পরে মেয়ে,জামাই এসেছে তার ঘরে,
'ভুবন জানা' বড়ই খুশী,আনন্দে প্রাণ ভরে।
সব শ্বশুর-ই কোন কালে,ছিলেন কারো জামাই,
নিজের অভিজ্ঞতায় জানা,কেমন টা ঠিক চাই!
খাওয়া-দাওয়া,শোয়া-বসায় ত্রুটি হ'লে পরে,
রাগ গিয়ে সব পড়বে যে তার মেয়ের-ই উপরে।
সেই ভয়ে-তে দেদার খরচ করেন 'ভুবন জানা',
জামাই মদন ভাব যে দেখায়,'এ সব উচিত মানা'।
এক সকালে ভুবন বলেন জামাই মদনেরে,
''চলো না হয় ঘুরে আসি একটু নদীর ধারে।"
নদীর ধারে গিয়ে মদন অবাক চোখে ভাবে,
'কিছু যদি না ব'লি তো খারাপ-ই দেখাবে'।

মদন বলে,"দেখছি এ যে বিরাট বড় পুকুর,
খুঁড়তে বোধ হয় টাকা এবং লোক লেগেছে প্রচুর।
এত বড় পুকুর কাটায় উঠল মাটি যত,
থাকলে জমা,পুকুর পাড়ে মাটির পাহাড় হ'তো।
কিন্তু দেখুন,ব্যাপার টা কি? ঢুকছে না তো মাথায়,
পুকুর আছে,তবে মাটি গায়েব হ'লো কোথায়?
জল ও দেখি পুকুর বেয়ে যাচ্ছে কোথায় চলে,
মাছগুলো তো মরেই যাবে,জল বেরিয়ে গেলে।
জল গুলোই বা যাচ্ছে কোথায়,বাবা,বলুন দেখি?
মাটির নীচে বিরাট কোন গর্ত আছে না কি?
মাইল কয়েক লম্বা পুকুর দেখি নি তো গাঁ-য়,
এই পুকুরের মালিক যে জন,কতই না তার আয়।"

মূর্খ জামাই নদী বুঝি দেখেনি এর আগে,
বুঝতে পেরে 'ভুবন জানা' বলেন মনের রাগে-
"তোমার মত বোকা পাঁঠার জন্মদাতা যারা,
আধেক মাটি আগে ভাগেই খেয়েছিলেন তারা।
বাকি মাটির আধা প্রমাণ খেয়েছি যে আমি,
নইলে কি আর আমার ঘরে জামাই হ'তে তুমি?
শেষ সিকি ভাগ কপাল দোষে খাচ্ছে আমার মেয়ে,
তোমার মত গুণধরের গলায় মালা দিয়ে।
এর পরেতেও মাটি যদি থাকে কিছু পড়ে,
যত্ন ক'রে নিয়ে গিয়ে,রাখো তোমার ঘরে।
কপালক্রমে তোমার ঘরে জন্ম যাদের হবে,
লেখাপড়া না শেখালে,ওই মাটি খাওয়াবে।"

দেখা,শোনা,চেনা,জানার শেষ তো কোথাও নাই,
নিত্য নতুন জানতে হ'লে 'লেখাপড়া' চাই।
চোখে দেখার অভিজ্ঞতায় আর ও বাড়ে জ্ঞান,
পুকুর,নদীর ফারাক কোথায়,হয় তা অনুমান।
মূর্খ মদন জন্মেছিল নদী বিহীন গাঁ-য়ে,
পুকুর কাটা দেখেছিল,সেথায় লোকালয়ে।
নদী চোখে দেখেনি সে,নাই তো 'লেখাপড়া',
জ্ঞান অভাবে নদীকে তাই পুকুর মনে করা।
মদন যেমন মূর্খ,তেমন অগুনতি এই দেশে,
এক মূর্খের দশা দেখে,অপর মূর্খ হাসে।
অল্প-বেশী মূর্খ সবাই,কোন না এক স্থানে,
নয় তো কি আর জ্ঞানীর বিচার করে গো অজ্ঞানে?

সাদিক সাকলাইন সৌরভ

পরিবর্তন

সেই পুরনো স্বভাবটা আমার
কাগজ কলম হাতে পেলেই
হোক যেমন তেমন একজোড়া ভ্রুর নিচে
দুটো খোলা চোখ আঁকা
এখনো যায়নি।

উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আমার
চিরচেনা অভাবটা আজও লেগে রয়েছে
ঘামের গন্ধের মতো বিচ্ছিরি ভাবে অস্তিত্ব জুড়ে
মসৃণ কাঠের পিঠে খোদাই করা
শিল্পীর বিমূর্ত কারুকাজ
নন্দিত নারীর পরনের মসলিন
রঙিন পুঁতির, মৃৎপাত্রের উয়ারি-বটেশ্বরী
এসবের চেয়ে টিনের থালায় একমুঠো সাদাভাত
বড়ো বেশি প্রিয়।

আবছা আবছা মনে পড়ে কবে একদিন
বলেছিলে মানুষ হিসেবে আমি লোভী
হলে হতেও পারে
তবু বড়ো কিছু পাবার বাসনা
বড়ো হবার ইচ্ছেকে লোভ বলা সমীচীন নয়
তা না হলে ক্রমশই মানুষ গুটিয়ে যেতে যেতে
একসময় সে অপদার্থে পরিণত হবে।

তবু আমি অপদার্থ হয়েই, বিশ্বাস করো
আমি থাকতে চেয়েছি সাদামাটা
কিন্তু প্রতিনিয়ত পাল্টে যায় কতোকিছু
সময় পাল্টায়, ঋতুর পালাবদল হয়
পুরনো পাল পাল্টিয়ে নৌকোয় লাগে নতুন পাল
পাল্টানোর এই ধারাবাহিকতায়
কিছু পাল্টাতে হবে বলেই
আমিও পাল্টে নিলাম
চশমার পাওয়ার।

পাওয়া না পাওয়ার ছলে

আহমেদ মুনীর

এই গোধূলী সন্ধ্যায়
টিপ টিপ বরষায়
বনজ মৃত্তিকা মায়ামোহ ঘ্রাণে
একাকী অঙ্গনে
তোমাকে খুঁজি আমি আকাশে
মহাকাশে চারধারে
পাওয়া না পাওয়ার ছলে

কোথায় কেমন আছো প্রাণপ্রিয়তমা ।।

তোমার রসে ভরা বঙ্গজ ঠোঁট
তুলতুলে গাল
বড় বড় চোখ
মধুতে মাখা বুকের জল
রূপালী আধান বাহুডোর
সৈকতে শোঁ-শোঁ অনন্ত আহ্বান
মহাসৃষ্টির গুম গুম রণন
বালুচর
আর জ্যোৎস্নামাখা নরম শরীর
আমাকে টানে যখন তখন তোমার
দিকে ভীষণ ভীষণ
পাওয়া না পাওয়ার ছলে
কোথায় কেমন আছো প্রাণপ্রিয়তমা।।

২৯ আগস্ট ২০১২


আক্ষরিক শিল্প ও সাহিত্য ব্লগজিনের যে কোনও লেখা বা লেখার অংশ, যে কেউ মূল লেখক বা সম্পাদককে না জানিয়ে বাণিজ্যিক বা অলাভজনক উদ্দেশ্যে নকল ও পরিবেশন করতে পারবেনা

২৭ আগস্ট ২০১২

‘আক্ষরিক’ শিল্প ও সাহিত্য ব্লগজিন কি? কেন?


আক্ষরিক’ শিল্প ও সাহিত্য কবি লেখকদের জন্য উন্মুক্ত একমাত্র ব্লগজিনপ্রবীণ ও নবীন লেখকদের মেলবন্ধন ঘটানো এবং নবীন অবহেলিত লেখকদের সবার কাছে তুলে ধরা আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্যআমরা চাই কবি ও লেখকদের লেখা নিয়ে প্রচুর আলোচনা, গঠনমূলক সমালোচনা হোক এই সাহিত্য ব্লগেনিছক গল্প, কবিতা, ছবি প্রকাশ নয় আলোচনা হোক সাহিত্য মূলধারারপ্রবীণ ও নবীন কবি,লেখকদের আশা, হতাশার কথা গোপন কেন থাকবে? আমার চাই প্রবীণ ও নবীন লেখকদের সাথে নিয়ে বাংলা সাহিত্য উজ্জ্বল করতেপ্রবীণ লেখকের থেকে শিক্ষা নিয়ে নবীনরাও এগিয়ে যাক, আর ‘আক্ষরিক’ শিল্প ও সাহিত্য ব্লগজিন সবসময় থাকবে সব লেখকদের সাথে

 

আপনার স্বরচিত গল্প,কবিতা পাঠিয়ে দিন এই ঠিকানায়ঃ



 

যে কোন তথ্য ও বিশেষ প্রয়োজনে কথা বলুনঃ

আক্ষরিক সম্পাদক

০১৮১৮ ১২৭০৯৭
০১৮১৮ ১৭৮৩৩৮
০১৮১৮৯৮১৪১৯
০১৮১৪১৫৮০৫০

 

২১ আগস্ট ২০১২

‘আক্ষরিক’ শিল্প ও সাহিত্য ব্লগজিন সম্পাদক এবং সম্পাদনা উপদেষ্টা


সম্পাদনা উপদেষ্টাঃ
------------------
মেরুন হরিয়াল

তন্ময় শুভ

জুয়েল দেব

শাত শামীম

জাহির মুনমুন

আবদুল্লাহ আল মামুন

 সম্পাদকঃ
-----------
নৈরিৎ ইমু


নির্বাহী সম্পাদকঃ
------------------
মুঃ আবদুল্লাহ আল ফয়সাল
তমিজ তমোহর

সম্পাদনা সহযোগীঃ
-----------------
নাজমুল হাসান

প্রচ্ছদঃ
----------------------
মো. মঈনউদ্দিন চৌধুরী

বর্ণবিন্যাসঃ
---------
মোঃ নজরুল ইসলাম

অলংকরণঃ
---------
জনী চৌধুরী ..
 

১২ আগস্ট ২০১২

অক্টোবর ২০১২