তামিম আল-বারঘুতির কবিতা
[মিশরের তাহরির স্কোয়ারে যাঁর কবিতা বার-বার পঠিত হয়েছে, এবং পরে অন্যান্য আরব দেশগুলোর গণবিপ্লবে যাঁর কবিতা পড়া হয়েছে, তিনি তামিম আল-বারঘুতি। তামিম-এর জন্ম কায়রোতে, ১৯৭৭ সালে। তাঁর বাবা ছিলেন প্যালেস্টিনীয় কবি মুরিদ বারঘুতি এবং মা নামকরা ঔপন্যাসিক মিশরীয় নাগরিক রাদওয়া আশুর। এ-পর্যন্ত তামিম-এর চারটি কাব্যগ্রন্হ ও দুটি আলোচনাগ্রন্হ প্রকাশিত হয়েছে। আনওয়ার সাদাত ও হোসনি মুবারক উভয়ের সময়েই প্রতিষ্ঠানবিরোধী কবি-লেখকদের হয় জেলে পোরা হত নতুবা নির্বাসনে পাঠানো হত। তামিম-এর বাবা-মাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। তামিম নিজেও মুবারকের আমলে নির্বাসনে ছিলেন। বর্তমানে তিনি ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে আরব রাজনীতি বিষয়ে অধ্যাপনা করেন।
তিউনিশিয়ায় গণবিপ্লবের সূচনা হলে ছাত্রনেতারা তাঁর কবিতার খোঁজ করেন ও জনগণের মাঝে তা পাঠ করে সমবেত সাধারণকে উদ্দীপ্ত করার প্রয়াস করেছিলেন। তারপর মিশরের তাহরির স্কোয়ারে জনগণ যখন একত্রিত হচ্ছিলেন তখন প্রতিদিন তাঁর কবিতা চেঁচিয়ে-চেঁচিয়ে পড়েছেন অনেকে। নিজের অজান্তেই তামিম হয়ে ওঠেন বিপ্লবের কবি। অন্যান্য আরব দেশে তারপর থেকে তিনি নিজে জনগণের মাঝে গিয়ে স্বরচিত কবিতা পড়েছেন। সম্প্রতি তাঁর কবিতা আরব ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করা আরম্ভ হয়েছে। এখানে তাঁর সে-রকম একটি কবিতার বাংলা অনুবাদ করার চেষ্টা করেছি। –ম. রা. চৌ ]
উপহার
আমার জীবনটাই একটি উপহার
যা আমাকেই দেয়া হয়েছে
আমার শূন্যতম জন্মদিনে,
আজকে আমি একটা উপহারের রিবন খুললুম,
তার মোড়ক খুললুম
আর তাতে অনেক জিনিস খুঁজে পেলুম,
সাধারণ,
কিন্তু বিস্ময়করও; সোনার ঘড়ি
আর সোনায় গড়া
জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত,
বাক্সের ভেতর একজন জোকার
তোমাকে হাসাবার জন্য
কিংবা ভয় দেখিয়ে মেরে ফেলার জন্য, তা নির্ভর করে অনেক কিছুর ওপর;
দুটি সুন্দর ডলপুতুল,
একটা খেলবার জন্য
অন্যটা নয়,
কয়েদির মুকুট আর একজন রাজার শিকল;
আমি আরও পেলুম রুইতনের এক জোকার
তুমি তাকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখতে পারো
সে একই রকম দেখায়;
আমি পেলুম বই,
আমি পেলুম লেবেল-আঁটা একটা দীর্ঘ টেপ
“পঞ্চাশ বছর ব্যাপী আরব-ইহুদি সংঘর্ষ” ;
একটা দোয়াতের ভেতর পেলুম নরক
আরেকটায় স্বর্গ;
পেলুম রেস খেলার মাঠের আরব ঘোড়া
গায়ে তার আঠা মাখানো
একটা পাথর পেলুম যা থেকে আগুন বেরোয় না;
বাক্সটার একেবারে তলায়
আমি পেলুম একটা সাদা কার্ড যাতে আমার নাম লেখা
আর কিছুই লেখা হয়নি তাতে।
আমি বুঝতে পারলুম না এই জিনিসগুলো নিয়ে কী করব;
হা ঈশ্বর, ধন্যবাদ,
কিন্তু কেনই বা কষ্ট করা ?
আমি সব কটি জিনিসই আবার রেখে দিলুম বাক্সের ভেতর,
বন্ধ করে দিলুম বাক্স,
মোড়কে মুড়ে দিলুম
তারপর আকাশের দিকে তাক করে ছুঁড়ে দিলুম,
উপহারের বাক্স রূপান্তরিত হল এক ঝাঁক উড়ন্ত পায়রায়
যাদের আমি চিরকাল অনুসরণ করব।
কেনই বা আমি অমন করলুম ?
আমি সত্যিই তা জানি না ।
অনুবাদ: মলয় রায়চৌধুরী
মূল লেখা এবং অনুবাদ দুইটাই সুন্দর। স্যারের আরও লিখা পড়ব এই আশায় থাকলাম।
উত্তরমুছুনঅনুবাদ কবিতার ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, মুল কবিতাটিও তুলে দেয়া দরকার ! তাতে মুলের স্বাদ কেউ নিতে চাইলে নিতে পারবে।
উত্তরমুছুনসৌভিক আপনি আপনার কবিতা কোন সময় কিসের বিত্তিতে লিখছেন তা কি কবিতা শেষে লিখে দেন? কোন কবি কি তার বইতে কখনো মূল কবিতা দিয়েছিল? আজব কথা বললেন!!
উত্তরমুছুনআহা। অপূর্ব উপহার।
উত্তরমুছুনKhub Vhalu laglu ei kobita. ek dhoroner illusion dai.
উত্তরমুছুন