৩০ সেপ্টেম্বর ২০১২

কুয়াশা

বাঘা বাণী

ঘ্যা... ঘ্যাউ, ঘ্যাউ ঘ্যাউচমকে গেলেন? কিছুই বুঝলেন না তাইনা?অনুভূতির একটা ধর্ম আছেঅচেনা কৌতূহল মনে চেনা অনুরন তুললে অনুভূতি বিরম্বনায় পরেবড় অস্বস্তি লাগেনা, আর বিরক্ত করব নাশুরুতে বলেছিলাম,আমি আপনাকে যা বলছি বুঝছেন তো?



ঠিক কোথায় আমার জন্মটা হয়েছিল বলতে পারব নামা বলেছিল, শাহবাগ থানার পাশে যে ফুলের দোকান গুলো আছে তার পিছনে আমি ভূমিষ্ট হয়েছিবড় আরামের যায়গাফুল বিক্রেতারা অবিকৃত ফুল, মালা, তোরা এখানে ফেলেআপনারা যা প্রিয় মানুষকে উপহার দাও আমি তার উপরেই মল ত্যাগ করিরাগ করলেন? আহা!কিভাবে বুঝাব, আপনাদের বোধ আমার সাথে মিলবে নাএইত সেদিন ছবির হাটের গেট দিয়ে ঢোকার সময় চুলওয়ালা এক ভদ্রলোক আমার গায়ে গরম চা মারলব্যাথায় ককিয়ে উঠেছি, প্রচন্ড রাগও হয়েছিলআপনাদের বোধ তাহলে কিরকম হবে? এই দেখ, হুজুগে একটু জ্ঞান দেওয়া শুরু করলামসরি! প্রিয়, যা বলছিলামআমরা প্রথমে এক বোন ও তিন ভাই ছিলামকিছু বুঝে ওঠার আগেই ভাই দুটি উধাও হয়ে গেলমা অনেক কেঁদে ছিলকেটি কে নিলনা মেয়ে বলে, আর আমার গায়ে লোম ছিল না বলে বেঁচে গেছিকেটিকে চিনছেনতো? আমার বোনসেই শিশুকালে দুজন এক সাথে কত খেলেছি!শাহবাগের ধূলোমাটি গায়ে মাখার দায়ে দুজনকেই মা শাসিয়ে ছিল, ঘ্যাও ঘ্যাও বলেধিরে ধিরে কেটে গেল মায়ার বন্ধনএক সকালে মা সেই যে চলে গেল, আর ফিরল নাঅনেক ঘুরেছিলাম সোহরাওয়ার্দী, রমনার মাঠেপিজি হাসপাতাল কিংবা বারডেমের সামনে, যেখানে ঠায় বসে থাকত সারা বিকেলকোথাও খুঁজে পাইনিশেষে আশা ছেড়ে দিয়ে পথে নেমেছিকেটির জন্য প্রথম প্রথম খাবার নিতামপরে সে নিজেই তার পথ বেছে নিয়েছে

মনিষীদের ঐ বানী টা আমার জীবন থেকে দেখেছি, “পথ পথিককে নয়, পথিকই পথের সৃষ্টি করেপথ যতই দুর্গম হোক ওটাতে বিচরন হবেইযেমন তোমরা জলে-স্থলে কিংবা বায়ু পথে সর্বত্রই ঘুরে বেড়াওকোথাও কি বাধা পাও? ঐ যে প্রয়োজনীতা উদ্ভাবনের জনকআবার তত্ত্ব কথা শুরু হয়ে গেলযাই হোক আমার কিশোর বেলায় যখন চারুকলার বারান্দায়, টিএসসির মোরে একা একা দিব্যি ঘুরে বেড়াই বেশ ভালই লাগেবেশ কয়েকবার লক্ষ্য করেছি চিকন ভ্রুর কিছুটা বেটে মেয়েটি সকালে এক যুবকের সাথে আবার, আরেক ভদ্রলোকের সাথে আবার রাতে অন্য কারও গাড়িতে কোথায় যেন যায়কয়েকদিন ধরে মেয়েটিকে না দেখে ওদের বাসার সামনে যাইতিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছেকি আর করা, বাসার সামনে কিছু ময়লা জমে ছিল ওগুলো সরিয়ে দিয়েছিমেয়েটির উপরে আমার মায়ার অন্য একটা কারন আছেআমার অতি প্রিয় বন্ধুর সাথে ওর দারুন সখ্যতাঅবাক হলেন? ভাবেছেন আমার আবার বন্ধু জুটল কি করে? সে এক বিচিত্র কাহিনী

এক শীতের রাতে যখন প্রচন্ড ঠান্ডায় জমে যাচ্ছি, কুয়াশার ঘোরে খচ খচ আওয়াজ পাচ্ছিজানেনইতো আমার শ্রাব্যতার সীমা প্রায় ৩৫০০০ হার্জশুয়েছিলাম শিখা চিরন্তনের পাশেছবির হাট থেকেই শব্দটা আসছেকেন যেন ঘেউ বলে সতর্ক করলাম নালেজ নাড়তে নাড়তে কাছে গেলামবড় বড় চুলের পাঞ্জাবী পড়া এক তরুণ, বেশ বড় গোঁফবয়সের সাথে মোটেও মানানসই নাআমি আবার চুল ওয়ালাদের দেখতে পারিনাসেদিন আমার গায়ে গরম চা মেরেছিল একজনতবু কিছু বললাম নাদেখি ব্যাটা কি করেআমার দিকে তাকিয়েই একটা মুচকি হাসিকিরে ঘুমাসনি? তুই কি আমার জন্যই অপেক্ষা করছিলি? চল গল্প করি বলেই মাথায় হাত বুলিয়ে দিলব্যাগ থেকে পাউরুটির গন্ধ পেলামপিছে পিছে হাঁটতে লাগলামলালন চর্চা কেন্দ্রে গিয়ে পাশে বসলামব্যাগ থেকে রুটি বের করে কিছুটা দিল, নিজেও কিছুটা খেলএকটা খাতা বের করে কিছুক্ষন কি যেন লিখলতার পর ঘুমিয়ে গেলআপনারা বড়ই বিচিত্র জীবঘুমের জন্য বাসা বাড়ি আছে, বস্তি আছে, হোটেল আছে যান সেখানে যানতা না করে পার্কে, ফুটপাতে, মাঠে যেখানে সেখানে খাওয়া ঘুমঅবশ্য সবাই যে এরকম ঠিক তা নয়তবে এভাবে এরা কেন থাকে আমার মাথায় ধরে না

প্রতিদিনকার মত সকাল হলআজকের সকালটা কেন যেন মনে হচ্ছে আমার জীবনের একটা শ্রেষ্ট প্রাপ্তি ঘটতে যাচ্ছেজীবনে ভালবাসা খুব একটা বেশী পাইনিবাবাকেতো কোনদিন দেখিনি, মাও চলে গেল অবেলায়শুনেছি কার্তিকের এক দুপুরে মস্তিষ্ক বিকৃতির অপরাধে মানুষ তাকে মেরে ফেলেছেযাক, এ বেলা এই নাবালক কবিকে পেয়ে ভালই লাগছেভাল লাগাটা ঠিক কতক্ষণ স্থায়ী হয় বলতে পারছি নাতবে এর হাঁটার গতি দেখে নিজেই অবাক হয়েছিসেই সকাল থেকে বেলা এগারোটা পর্যন্ত অবিরাম হেঁটে চলাপাঞ্জাবীর পকেট থেকে একটার পর একটা সিজার সিগারেট জ্বালিয়ে যাচ্ছেহায় হায়, এভাবে সিগারেট খেলে আমাদের বন্ধুত্বের অবসান তো দেখছি অনিবার্যকতদিন বেঁচে থাকবে এভাবেঘেউ ঘেউ... হারামজাদা বজ্জাত রিকশাওয়ালাআরেকটু হলেই বন্ধুর গায়ে তুলে দিচ্ছিলমাতাল কোথাকারআবার হাঁটা, এবার গন্তব্য শিল্পকলার দিকেএরপর এভাবে কেটে গেল পুরো শীতকালমৈত্রীটা কুয়াশার মত কেটে গেল কিনা বুঝলাম নাআগের মত আর হাসে না বন্ধুকেমন ছল ছল তাকিয়ে থাকে আমার লেজের দিকেবটের ছায়ায় বসে তোমরা যেমন তাকাও মধ্যান্নের রোদে, হেলে পরার মানসেঅজানা আশঙ্কায় মনটা কেঁপে ওঠেআসলে আমাকে ভালবাসে খুব, ঠিক তার কবিতার মতইদানিং আমাকে কখও চোখের আড়াল করে নারাতে ঘুমানোর আগে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় আর কি যেন বিড়বিড় করেআহারে! আমার যদি হাত থাকত সারারাত পাখার বাতাস দিতামশত ক্লান্তির পরেও যখন আমাকে বাঘা বলে ডাকে সব ছেড়ে দিয়ে ছুটে আসিআমার এই বাঘা নাম দেয়ার কারনে আমি মোটেও খুশী নইগ্রাম্য প্রবাদের মত হয়ে গেল না? ‘ছাল নাই কুত্তার বাঘা নামআবার আমি যত নিষেধ করলাম, এই লেখার শিরোনাম বাঘাবানী না দিয়ে বাঘাবমী দাওকে বোঝে কার কথা! যাক, ঐ আঁতেলের কথা বাদ দিন তো

আজ বৃহস্পতি বার, লালন ভক্তদের গুরুবারসন্ধ্যা থেকে নানান ধর্মের,মতের মানুষের সমাগম হয় প্রিয় ধামেআমার ওখানে যাওয়া নিষেধ তাই কবি মনে ক্ষোভের অন্ত নাইএর জন্য বহু কাথা শুনতে হয়েছে তাকেআমিও অবেলায় বিরক্ত করিনাথাকনা কিছুটা সময় নিজের মাঝে, আত্মার সান্নিধ্যেলালনের দেহ্তত্ত্ব, আত্মাতত্ত্ব, ঈশ্বরতত্ত্ব গান গুলো আমারও ভাল লাগেভাল লাগে একতারার ঐক্যতানতোমাদের মাঝে যেমন শাসনতন্ত্র আছে শোসণতন্ত্রের অবয়বে আমাদের মাঝেও তেমন আছে মনতন্ত্রআমরা আমাদের জাতিকে নয় মনতন্ত্রে নিজেকে শাসন করিএতেই সমাজ সুশৃঙ্খল আমাদেরনিজেদের প্রশংসা আর না করলামকবির সকাল থেকেই মন খারাপসরকার ঘোসনা দিয়েছে পাগলা কুকুর নিধনেরপুলিশের অভিযান শুধু পাগলা কুকুরেই সীমাবদ্ধ নয়, পথে ঘাটে কুকুর পেলেই হলসোহরাওয়ার্দীর মাঠে শিখা চিরন্তনের পাশে বড় ওয়ালের ভিতরে যে ঘর ওটার মাঝে আমাকে একটা রুটি দিয়ে কবি বলল এখানে থাক আজকোথাও যেতে হবে নাভিতরে ভিতরে রাজী না হলেও রুটির লোভে থেকে গেলামএটাই আমাদের স্বভাবখাবার পেলে প্রভুর কথা ভুলে যাইলালনের ঐ গানটার মত,

গুরু কার্য মাথায় নিয়ে কি করি আর কোথায় যাই

রাত পোহালে পাখি বলে দেরে খাই দেরে খাই

খাবার শেষ করে কিছুক্ষণ বসে থাকলামতোমাদের সাথে আমাদের বড় পার্থক্য কি জান? তোমরা যেমন শান্ত স্বভাবের আমারা তার বিপরীতচঞ্চলতা আমাদের একটা মুদ্রা দোষবন্ধু একা একা লালন চর্চা কেন্দ্রেআবার আজ ওখানে শিরনী বিতরন হবে সেই লোভ সামলাতে না পেরে এক পা দুপা করে ধামের দিকে যেতে লাগলামএকটা গান ভেসে আসছিল, ‘পাখি কখন জানি উড়ে যায়ষষ্ঠইন্দ্রিয় কেমন যেন বিপদের আভাস দিচ্ছেবন্ধুর কোন বিপদ নাতো? ধামের দিকে দৌড় দিতে যাব অমনি ঠাস!

কার্তিকের পলাশ আশ্বিনেই ঝরে গেলহলদে বর্ণের ইটের রং লালচে হল ঝাঝালো বুলেটেচোখটা কেমন ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকের সাথে সাথেএকটা তারাকে জ্বলতে জ্বলতে নিভে যেতে দেখলামমৃত্যুক্ষুধায় কি তারাও নিভে যায়?তবু আবছা আলো কিছুক্ষণ খুঁজল চুলওয়ালা বন্ধুর একফোঁটা চোখের জলএরপর কত অমাবশ্যা গেল কত পূর্ণিমার পেছনে পেছনেকই কখনও তাদের দেখা হয়েছে কি?শুধু বাতাসের মুখে একদিন শুনেছিলাম কবি বন্ধুর বাঘাকাব্যের দীর্ঘশ্বাসনীল পদাবলীরনীল তরঙ্গে মিশে গেছে সে সুরআপন কণ্ঠে বেজে চলে সে অনুরক্ত অনুরন,

ঘ্যাউ... ঘ্যা, ঘ্যা ঘ্যা, ঘ্যা ঘ্যাউ,

ঘ্যাউ, ঘ্যাউ, ঘ্যাউ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন